সম্প্রতি করোনাকালীন সময়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জী র একটা আর্টিকেল নিয়ে মোটামুটি ভালই সোরগোল হয়। ক্রিটিসাইজই বলা উচিত। ...
সম্প্রতি করোনাকালীন সময়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ
ব্যানার্জীর একটা আর্টিকেল নিয়ে মোটামুটি ভালই সোরগোল হয়।
ক্রিটিসাইজই বলা উচিত। যদিও আমার মনে হয় আধিকাংশ মানুষই আর্টিকেলটা পড়েন নি, তারা
শুধু হেডলাইন না হয় পুরো আর্টিকেলের কয়েকটা বাছাইকৃত অংশ পড়েছেন।
যাইহোক, আমি ভাবছি সবার ইকোনোমিকস
নিয়ে ব্যসিক কিছু ধারণা থাকা উচিত। তাই আজ প্রথম পর্বে অর্থের ছাপানো নিয়ে সাধারণ
ও ব্যবহারিক কিছু লিখছি।
“ একটা দেশ সাধারণত চারটি উপায়ের
একটা মেনে টাকা ছাপায়। সেগুলো হলোঃ 1. Fixed Fiduciary system. 2. Proportional Reserve System. 3. Minimum
Reserve System. 4. Maximum Limit System. বাংলাদেশ Minimum Reserve System পদ্ধতি অনুসরণ করে। এ পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সর্বনিম্ন পরিমাণ স্বর্ণ ও বৈদেশিক
মুদ্রা জমা রেখে পছন্দমত নোট ছাপায়। (পৃঃ ৫৬৮, সামষ্টিক অর্থনীতি,
ভলিয়মঃ৩, মনতোষ চক্রবর্তী)
অর্থাৎ যেকোনো দেশের
সরকারের যত ইচ্ছে টাকা প্রিন্ট করার স্বাধীনতা রয়েছে। তবে কোনো দেশই যত ইচ্ছা টাকা
প্রিন্ট করে না, টাকা প্রিন্ট করা হয় সেই দেশের অর্থনৈতিক প্রয়োজন অনুসারে, এরসাথে
দেশের মানিটারি পলিসি ও
ফিসকাল পলিসি কানেক্টেড । টাকা উৎপাদনের পরিমাণের সঙ্গে জড়িত দেশের মানুষের উপার্জন, অর্থনৈতিক
চাহিদা, দেশের সম্পদ ইত্যাদি। তবে প্রয়োজনের বেশি টাকা উৎপাদন করলে কিছু সমস্যা শুরু হয়।
প্রথমত
যে সমস্যাটা শুরু হয় সেটা হলো মুদ্রাস্ফীতি ।
(মুদ্রাস্ফিতি নিয়ে পড়ুনঃ https://muktokotha2020.blogspot.com/2021/08/blog-post_7.html )
ধরা যাক, একটা দেশে সম্পদ বলতে রয়েছে দশটা
আম। আর সেই দেশ বছরে ২০ টাকা প্রিন্ট করে। পরিবহন খরচ, খুচরা মূল্য পাইকারী মূল্য ইত্যাদি
জটিলতা বাদ দিয়ে ধরেই নেই প্রতিটি আমের মূল্য ২ টাকা। তাহলে দেশের মোট সম্পদ আর মোট
কারেন্সী ভারসাম্যপূর্ণ হল। পরের বছর ঐ দেশটি সর্বমোট ৪০ টাকা প্রিন্ট করল, কিন্তু
মোট সম্পদ বলতে দশটি আম, সম্পদ নির্দিষ্ট রইলো । যেহেতু দেশে নতুন কোনো সম্পদ নেই,
ওই ১০টি আম কেনার জন্য বরাদ্দ হল ৪০টাকা, অর্থাৎ প্রতিটি আমের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেল।
এক্ষেত্রে কারো কাছে অর্থের পরিমাণ বেশি থাকলে সে একটা আমের জন্যে বেশি টাকা দিতেও
রাজি থাকে। এভাবেই দেশের মোট সম্পদের তুলনায়
অতিরিক্ত টাকা উৎপাদন করলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়, টাকার দাম বা ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
একে বলে মূদ্রাস্ফীতি।
তবে
অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে, এক্ষেত্রে অর্থের যোগান বাড়ে কিন্তু সম্পদের পরিমাণ
নির্দিষ্ট থাকতে হবে।
সেজন্যেই
সাধারণত অর্থের যোগান বাড়ানো হয়না। কারণ অর্থের পরিমাণের সাথে অর্থের ক্রয় ক্ষমতা
নির্ভর করে। অর্থের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেলে অর্থের পরিমাণ বেশি হলেও লাভ নেই। যেমন
দেখুন, আগে আপনার কাছে এক টাকা থাকলেই একটা আম কিনতে পারতেন, এখন আপনার কাছে দুই
টাকা। দুটাকা দিয়ে এখন আপনি দুটা আম কিনতে পারবেন না, কারণ ইতোমধ্যে আমের দাম ও
বেড়ে গেছে। তাহলে আর আপনার কাছে দুই টাকা থেকে লাভ কি হলো?
এটা
একটা সাধারণ ধারণা। কারণ দেশের অর্থনীতি আরো বড় এবং জটিল।
অর্থের
মোট পরিমাণ ছাপা হওয়া অর্থই না, বরং এর সাথে অর্থের গুণক তত্ত্ব জড়িত। অর্থাৎ এক
একক অর্থ কতবার হাত বদল হলো। টোটাল অর্থের পরিমাণ নির্ভর করে ছাপানো অর্থ এবং তার
গুণকের গুণ ফলের উপর।
যেমন
ধরুণ, কয়েক মাস আগে আমরা দেখি জুয়া খেলার গডফাদারদের ধরে তাদের বাসায় রেইড দিয়ে
প্রচুর নগদ অর্থ পায়। এই অর্থ বাজারে অনুপস্থিত। অর্থাৎ এই টাকার হাত বদল না হওয়ার
কারণে বাজারে অর্থের ভৌতিক সঙ্কট দেখা দেয়, ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সে ধাক্কা
সামাল দিয়ে অর্থ ছাপাতেই হয়। এভাবে আমরা যদি অতিরিক্ত পরিমাণ অর্থ ব্যাংকে না রেখে
বাসায় রেখে দেই, অর্থবাজারে সে টাকা কোন কাজে আসে না। এভাবেও অর্থের মূল্য কমতে পারে।
তবে মানুষের অর্থের উপর আস্থা বিবেচনা করেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
অবৈধভাবে টাকা ব্যক্তিগতভাবে রিজার্ভ করে না রাখা পর্যন্ত সাধারণত কোন সমস্যা হয়
না।
যাইহোক,
একটা দেশে যত বেশি টাকা হাত বদল হবে তত ভাল অর্থনীতির পক্ষে। কিন্তু অর্থের পরিমাণ
বেড়ে গেলে হাত বদলের পরিমাণ কমে যায়।
আবার
দেখা যায়, বিনোয়েগের জন্যে ঋণ নিয়ে সে টাকা বিনোয়েগ না করে মানি লন্ডারিং করছে।
এতেও মুদ্রার মান কমে।
আমরা
দেখি, বিভিন্ন সময়ে সরকারী কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধি করা হয় (মজুরী বৃদ্ধি জনিত যে
মুদ্রাস্ফীতি হয় তাকে Wage Push Inflation বলে।),
কিংবা করোনা সময়ে করোনায় হতাহত সরকারী কর্মকর্তাদের জন্যে যে আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা
দেয়া হয়েছে, এটাও সরকারের জন্যে এক ধরণের আনপ্রোডাক্টিভ ব্যয় । সরকারের সকল ধরণের
আনপ্রোডাক্টিভ ব্যয়ের জন্যেও মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে পারে। এসব কারণের পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতি
র অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমনঃ ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি, ঘাটতি অর্থসংস্থান, যুদ্ধ ব্যয়
নির্বাহ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি।
তবে অর্থনীতির প্রায় অংশের সাথেই সাধারণ মানুষের
বিশ্বাস ও আস্থার প্রভাব রয়েছে। আর এই তত্ত্ব শুধু মাত্র ‘সাধারণ’ অবস্থার জন্যে।
মন্দা, দুর্যোগকালীন সময় মোকাবেলায় অর্থনীতির ভিন্ন কিছু থিউরি রয়েছে।
মানি লন্ডারিং সম্পর্কে জানতে চাই
ReplyDeleteমানি লন্ডারিং
Deletehttps://muktokotha2020.blogspot.com/2021/08/money-laundering.html?m=1