সুশাসন নিয়ে পড়ছিলাম। পড়তে পড়তে কিছু বিশ্রী সত্য কথা বলার তাড়না অনুভব করলাম। প্রথমত, মানুষ সুশাসন নিয়ে পড়াশোনা করে কম বা করে না। তা...
সুশাসন নিয়ে পড়ছিলাম। পড়তে পড়তে কিছু বিশ্রী সত্য কথা বলার তাড়না অনুভব করলাম।
প্রথমত,
মানুষ সুশাসন নিয়ে পড়াশোনা করে কম বা করে না। তারা নানান ভাবে সুশাসনের বৈশিষ্ট্য ও অভিজ্ঞতা লাভ করে। সেটা হতে পারে পরিবার বা সংগঠন থেকে। আমাদের দেশে নানান কারণেই পরিবার থেকে যথাযথ সুশাসনের ধারণা লাভ কঠিন হয়ে যায়, তখনি আসে সংগঠনের ভূমিকা।
প্রাচীনকাল থেকেই দল বা সংগঠনের অস্তিত্ব ছিল। শুরুর দিকে 'আত্মরক্ষা' হলেও পরে তা শোষণের রূপ নেয়। সে ইতিহাসে যাচ্ছি না, মানুষ দলে চলে, চলতে চলতে তারা ২১ শতকে এসে দেখলো সিভিতে একটা সংগঠনের নাম থাকলে নানান সুবিধা হয়। তারপর একটা নতুন যুগের সূচনা হয়।
আগে যারা একসাথে বসে গল্পগুজব করতো, তারা এরপর একটা নাম দিয়ে গল্পগুজব শুরু করে, চারিদিকে সংগঠনের ছড়াছড়ির পর, সংগঠনের মনোপলি শুরু হয়। সংগঠন করা বা চালিয়ে নেওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার, তখনি বড় বড় সংগঠন বা NGO গুলোতে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। বড় সংগঠন বা NGO গুলোর কার্যক্রম নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। কিছু অযৌক্তিক আবার কিছু যৌক্তিক। সব প্রপাগাণ্ডা বলে চালিয়ে দেওয়া হাস্যকর। আবার সব মেনে নেওয়াও বোকামি।
সে যাক, NGO নিয়ে অনেক কোয়ালিটেটিভ রিসার্চ আছে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড, আপনারা একটু গুগল করলেই পেয়ে যাবেন। আজকে আসি সুশাসন নিয়ে।
সুশাসন কী, কেন, কিভাবে সেটা যাক, সুশাসন কে খুব সাধারণভাবে সঠিক শাসন বললেও ভুল হয় না।
একটা দৃশ্যপট দেখি:
আপনি যখন খেলতে যাবেন,
পছন্দের মানুষকে অফ সাইডে ফিল্ডিং দিবেন, অপছন্দ হলে লেগ সাইডে দিবেন, কিংবা পছন্দের মানুষকে আগে ব্যাটিং দিবেন, অপছন্দের হলে বোলিং, কিংবা আপনিই আগে ব্যাটিং বা বোলিং করবেন, এটা কি ঠিক? এভাবে আমরা খেলতে খেলতে সুশাসন কে বলি দেই।
"কাজ করতে করতে" দৃশ্যপট:
আপনি সংগঠন চালাচ্ছেন, তারপর ধরেন আপনি ছেলেপেলেদের দিয়ে সংগঠন চালাচ্ছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছেলেপেলেরা আসছে জাস্ট সিভিতে সংগঠনের নাম এড করতে, এটা জেনে আপনি এমন কিছু কাজ করছেন যা সংগঠনিক নৈতিকতার মধ্যে পরে না।
আপনি আর্থিক না হলেও মেধাবৃত্তিক শোষণ করছেন, এটা আর্থিক শোষণের চেয়ে বেশি ভয়াবহ।
"দলগত কাজ, কাজের দর্শন, নিজের অবিন্যস্তদের প্রতি মানসিকতা" একবার পরিবর্তন হলে সেটা একটা "Chain Reaction" শুরু করে। এই দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।
মোটামুটি ৮/১০ বছরের অল্পস্বল্প অভিজ্ঞতা থেকে যা দেখলাম, যারা "মানুষ" নিয়ে সরাসরি কাজ করে, তাদের আসলে এই কাজ নিয়ে কোন প্যাশন নাই, তারা স্রেফ মাসে খেয়ে পরে থাকার জন্যে চাকরি করে, আর সজ্ঞানে কিংবা নিজের অজান্তেই ছোট বেলার মানসিক ট্রমার বহিঃপ্রকাশ ঘটান নানান ধরণের অনৈতিক কাজের মাধ্যমে।
তরুণ নির্ভর প্রতিষ্ঠান গুলো খুব সেনসিটিভ। আমাদের তরুনরা মোটামুটি কম পড়াশোনা করেই বড় হতে থাকে। তাদের "বায়াস" বা "ম্যানুপুলেট" করা সহজ। এটা অনুধাবন পূর্বক এক "প্রো" লেভেলের "শোষক সমাজ" সৃষ্টি হয়। তারা "প্রতিবাদ" বা "মুক্তি"র ডাক দেয়, তরুণ সমাজকে উদ্বেলিত করে ব্যবসা শুরু করে। আগে ব্যবসা হত পণ্য নিয়ে, এখন ব্যবসা হয় দর্শন ও মতবাদ নিয়ে।
তো এটা কি কেউ বুঝে না? যারা প্রতিবাদ করে তারা কি না বুঝেই করে?
না বুঝে করে না, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা ব্যবসায় অংশীদারিত্ব না পেয়ে প্রতিবাদ করে৷ অল্প শেয়ার পেলেই দলভুক্ত হয়ে যায়। ঝামেলায় পরে যায় লিডারের আসল চেহারা না বুঝে প্রতিবাদে অংশ নেয়া গুটি কয়েক। বর্তমানে যারা সুশাসন, নৈতিকতা, সাম্য এসব নিয়ে সোচ্চার, হাতেগোনা কয়েকজন বাদে অন্য সবাইকে যা চায় তা দিয়ে দেখেন, তারা আরো বড় শোষক হবে। সাপ, বাঘ, ভাল্লুক দেখে চেনা যায়, তাই নিরাপদে থাকা সহজ, মানুষ বহুরূপী, তাই তাদের থেকে সাবধান থাকা যায় না।
No comments