একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে ছাত্রদের চুল কাটার ঘটনা একটা মজার দৃশ্যপট প্রকাশ করে, প্রথমত, শুরুতে কিছু বা কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় ড্রেস ...
একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে ছাত্রদের চুল কাটার ঘটনা একটা মজার দৃশ্যপট প্রকাশ করে,
প্রথমত,
শুরুতে কিছু বা কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় ড্রেস আপ নিয়ে রেস্ট্রিকশন দেওয়ার চেষ্টা করে, বিশেষ করে মেয়েদের, যেমন ক্লাসে এই ড্রেস পরা যাবে না, হলে এই ড্রেস পরা যাবে না।
কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনও শুনা যায়, ছেলেমেয়ে এক সাথে বসা যাবে না।
এরপর সেটা রূপ নেয়, "কথা বলা যাবে না"তে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বা ডিপার্টমেন্ট সরাসরি কথা বলতে, লিখতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সরাসরি নোটিশ জারি করার মত ইতিহাস আছে।
ধীরে ধীরে, ব্যবহার, চিন্তা, দর্শন ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। কিন্তু কথা হচ্ছে, নিয়ন্ত্রণ করার মত জ্ঞান আর প্রজ্ঞা আছে নাকি তারা ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।
-
-
নিয়ন্ত্রণ করতে সবাই চায়, এবং করেও কেউ কাউকে না কাউকে নিয়ন্ত্রণ করে, একদম " নিয়ন্ত্রণহীন" কেউ নেই।
এখন কথা হচ্ছে, কে ও কেন নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে?
কোন এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেছিলেন, তিনি নাকি ছাত্রছাত্রীদের ব্যক্তিগত চ্যাট পড়ার অধিকার রাখেন। যেটা সরাসরি সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন।
কে করতে চাচ্ছে, কেন চাচ্ছের চেয়ে আমার কাছে সবচেয়ে জরুরি মনে হয় কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে এটা।
লিডারশীপ বা প্রজ্ঞার বালাই নাই, ক্ষমতার অপপ্রয়োগ দিয়েই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে বলে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী প্রমাণ করে।
এভাবে বিতর্কে কেন আসতে চায় মানুষ জন, এটা একটা ভাবনার বিষয়। একটা সময়ে ব্যক্তি নিজেকে এত শক্তিশালী ভাবে যে সে নিজেকেই প্রতিষ্ঠান দাবি করে বসে। এটা একটা মনঃস্তাত্ত্বিক সংকট।
সে যাক,
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে চুলের স্টাইল জরুরী নাকি শিক্ষার্থীদের ভাল শিক্ষাদান, দর্শন ও ব্যক্তিত্ব সৃষ্টি করা জরুরী?
এই প্রশ্নের উত্তরের জন্যে আরেকটা প্রশ্ন জরুরী,
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাত্রছাত্রীদের কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে?
নানান সময়ে ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হলে সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বলার নজির আছে যে, "এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের ঘটনা, আমাদের এখতিয়ারের বাইরে।" যদিও সম্মানিত ব্যক্তিরা তাও যতটুকু সম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করে থাকেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ে প্রায় সবার বয়স ১৮+। শেষের দিকে সবার বয়স ২৪/২৫/২৬ হয়ে যায়। এই বয়সের একজন শিক্ষার্থীকে ক্লাসে চুল কেটে দেওয়ার মত ঘটনা ঘটার আগে কল্পনাও কিভাবে করা যায় এটাই বিষ্ময়কর!
পত্রিকায় এই নিউজ দেখে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল, গ্রামে চোর ধরলে তাকে উত্তমমধ্যম দিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হত!
আমরা কি সময়ের সাথে না এগিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছি?
নাকি আমাদের মস্তিষ্ক কর্পোরেট পুঁজিবাদীরা দখল করে নিয়েছে?
ছোট চুল মানেই ভদ্র আর বড় চুল মানেই অভদ্র এই মানসিকতাই বা কীভাবে সৃষ্টি হল? স্যুট বুট পরে এসি রুমে মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্ত মানুষের টাকা খসানোর সময় চুল বড় রাখা যাবে না , এই মনঃস্তাত্ত্বিক ভাবনা কি বিস্তার লাভ করছে?
নাকি পদের ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করার নগ্ন চেষ্টা? নেতৃত্ব দেখাতে না পারলে কর্মী ছাটাইয়ের মতই অবস্থা।
যদিও আজকাল প্রচুর বিশ্ববিদ্যালয় বানানো হচ্ছে,
কিন্তু প্রকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ কয়টা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে? কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর মত দক্ষ ও সৎ লোকবল? এই প্রশ্ন এই জন্যেই উঠে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি, রিসার্চ পেপারে চুরি সহ সহকর্মী ও ছাত্রীদের বাজে প্রস্তাব নিয়ে প্রায়শই অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকার শিরোনাম হয়। নিতান্ত শিক্ষকতা একটা সম্মানিত পেশা বলেই হয়ত এসব অনিয়মের খুব একটা বিচার হয় না তাই এসব ঘটনা কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
এখনো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪/৬ বছর আগের শীট আগের রাতে মুখস্ত করে পাশ করতে হয়, কারিকুলামে কোন পরিবর্তন নেই, গবেষণায় সংযুক্তি নেই। দিন দিন বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা, বাড়ছে বাজারের চাহিদা আর গ্রেজুয়েটদের জ্ঞানের ব্যবধান।
এর দায় সব শিক্ষার্থী আর সরকারের কেন নিতে হবে? তাহলে সরকার এত এত টাকা দিচ্ছে কেন বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে?
শিক্ষিত বেকার আর অশিক্ষিত বেকারের পার্থক্য কতখানি?
শুধু শিক্ষিত বেকার বানাতে বছরে কোটি কোটি টাকা খরচ করতে হয়।
তারচেয়ে বরং সে টাকা দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি বানানো যায়, সেখানে অশিক্ষিত বেকারদের ট্রেনিং দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায়।
যদি বিশ্ববিদ্যালয় থাকেই,
সেক্ষেত্রে চুলের স্টাইল, শার্টের কালার, হলে মেয়েদের ড্রেস, ক্লাসে পাশাপাশি বসছে কিনা এসব চিন্তা না করে বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ, গবেষণা, গবেষণাধর্মী কারিকুলাম সৃষ্টি করে দেশের জন্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কাজ করা উচিত।
দেশের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক দায় আছে।
যাইহোক,
দেশ ও জাতীর ইতিহাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের গৌরবময় অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অযাচিত, অশোভন ব্যবহার না মেনে বরং প্রতিবাদ করার ইতিহাস আছে।
বঙ্গবন্ধুকে বহিস্কৃত হতে হয়েছিল,
কিংবা ৫২, ৬৯, ৭১ এমন কি এরশাদ বিরোধী আন্দোলনও।
ইতিহাস থেকে কিংবা, ইতিহাসের জন্যে,
এ ধরণের ব্যবহার কাম্য নয়।
No comments