বেশ কয়েকদিন আগে সংবাদপত্রের এমন নিউজ হয় যে, " চট্টগ্রামের পাঁচ তারকা হোটেল 'রেডিসন ব্লু'তে খাবারের বিল দিতে না পেরে চট্টগ্রা...
বেশ কয়েকদিন আগে সংবাদপত্রের এমন নিউজ হয় যে, "
চট্টগ্রামের পাঁচ তারকা হোটেল 'রেডিসন ব্লু'তে খাবারের বিল দিতে না পেরে চট্টগ্রামে এক যুবক রেডিসন ব্লু থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন"।
যেহেতু মৃত যুবকের ভাষ্য জানার সুযোগ নাই, আর এসব ঘটনার তদন্ত খুব একটা আগানোর সম্ভাবনা নেই, ধরে নেওয়া যাক "রেডিসন ব্লু" কর্তৃপক্ষের বক্তব্যই সঠিক।
যদি সঠিক-ই হয়, এখানে একটা জ্বলজ্বলে বাস্তবতা আছে, বেশ কয়েকবছর আগে, যখন রেডিসন বানাচ্ছিল, ছবিতে যেখানে মাইক্রোটা দেখা যায়, তার একটু সামনে খুব বাজে রকমের একটা খোলা ডাস্টবিন ছিল।
এটার আশপাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সবাই শ্বাস নেওয়া বন্ধ করে দ্রুত হেটে যেত, যেখানে কাপড়ের ও খাবারের দোকান এখানে সবাই মূত্র বিসর্জন করতো, তবু ১০/১২ জন অসহায় মানুষ এখানেই ঘুমাতো, দিন কাটাতো।
রেডিসন হওয়ার পর অবস্থার রেডিক্যাল চেইঞ্জ আসে। ছিন্নমূল মানুষ দৌড়ানো শুরু হয়, ডাস্টবিন ভাঙা হয়, চা - বিস্কুটের দোকান সরিয়ে নামীদামী রেস্তরাঁ বসে। ছেলেপেলেরা বাইক-গাড়ি নিয়ে আসে, সন্ধ্যায় এই এলাকায় ভীর বাড়ে, বাড়ে গাড়ির পার্ক। আস্তেধীরে যাদের আর্থিক সক্ষমতা কম তারা কাজির দেউরির মোড়ের কাছাকাছি আড্ডা দিতে শিখে।
অর্থ ঠিক করে দিচ্ছে আপনি কোথায় বসবেন, গল্প করবেন।
এই টাকার রাজত্বে সবাই ভুলে যায়, ছিন্নমূল মানুষগুলো কোথায়, ছেলেটা বিল দিতে না পেরে লাফিয়ে মরলো কেন, কেন কেউ কেউ আউট স্টেডিয়াম ফেলে কাজির দেউড়ি মুখি হচ্ছে।
অবশ্য এটাই একটা নিয়ম হয়ে গেছে, সবাই নিয়ম মেনে নিয়েছে।
ছোটবেলায় জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশন পড়ে অনেক আন্দোলিত হয়েছি, একটার গল্প এখনো মুখস্ত, নামটা ভুলে গেছি।
গল্পটা এমন,
শহরে সব ধনী মানুষ থাকে, চাকচিক্যময় জীবন, আলো, অফুরন্ত বিলাসিতা। গরীব মানুষের কলোনি শহর থেকে দূরে। তারা শহরে প্রবেশের অনুমতি পায় না। সবার জীবনে অভাব, ইলেক্ট্রিসিটি নেই, কোন রকমে বেঁচে থাকে।
বা,
কয়েকদিন আগে In time মুভিটা দেখছিলাম, ধনী না হলে শহরে প্রবেশ করার অনুমতি নেই।
এই আর্থিক সক্ষমতার বেড়াজালে আটকে,
বাসায় গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়ার চেয়ে রেডিসন থেকে লাফ দেওয়া খারাপ সিদ্ধান্ত ছিল না।
তাদের জন্যেই কিছু মানুষের জীবন কঠিন হয়ে যায়। নিউজের কমেন্টে সবাই তাকে মানসিকভাবে শক্ত হতে আহ্বান জানায়, জীবনে যুদ্ধ করতে শেল্লল্লখায়,
কেউ এই সিস্টেম ভাল না বলে না। তাদের আহ্বানে অবস্থার পরিবর্তনের ইঙ্গিত নেই, বরং এখানে আছে মানিয়ে নিতে সেখার ইঙ্গিত।
তারা ভাবে না,
রেডিসনে খাবারের দাম কত, আর বাইরে কত। বিল চাওয়া ছাড়া রেডিসন ব্লু আর কি পদক্ষেপ নিয়েছিল?
এই বাণিজ্যিক শহরে সবকিছু নিয়েই বাণিজ্য করতে হবে কেন? শহর উন্নয়নের সূচক হিসেবে পাঁচ তারকার হোটেল আছে কিনা, থাকলে যেমন সূচক বাড়ে, পাঁচ তারকা হোটেল থেকে বিল দেওয়ার ভয়ে কেউ আত্মহত্যা করলে কমে না কেন? সেই সূচক কি "আগে রেডিসনের অপজিটে রাস্তায় ঘুমানো মানুষগুলোর বর্তমান আবাসস্থল" এর উপর ভিত্তি করে উঠানামা করে?
সব ব্যবসায়ীক সিদ্ধান্তগুলো সমাজের এক শ্রেণীর মানুষের কথা চিন্তা করেই কি নেওয়া হয়?
সে যাক,
পাঁচ তারকা হোটেলে মারা গেলে কি লাশের মূল্য বাড়ে?
লাশের স্থান কি মর্গের ভাল পরিষ্কার খোপটায় জুটে?
This comment has been removed by the author.
ReplyDeleteএটা ভালো হয়েছে অনেক ❤️
ReplyDelete