তোমার সাথে বাকি জীবন কাটায়া দেওয়ার পরিকল্পনা বা চিন্তাভাবনা ছিল না। আমার বাউন্ডুলে জীবনের অভ্যাস, লাগাম ছাড়া জীবনের ফ্যান্টাসি! ছোট বেল...
তোমার সাথে বাকি জীবন কাটায়া দেওয়ার পরিকল্পনা বা চিন্তাভাবনা ছিল না। আমার বাউন্ডুলে জীবনের অভ্যাস, লাগাম ছাড়া জীবনের ফ্যান্টাসি!
ছোট বেলায় এদিকওদিক করে টিউশন ফীর কিছু টাকা মেরে বই কিনার বাজে স্বভাব যে আমার ছিল না, তা দাবী করা অনুচিত।
ভরদুপুরে স্কুল পালিয়ে নুপূর মার্কেটের দোকান সব তোলপাড় করে, স্রেফ বন্ধু মহলে বিজ্ঞতার জন্যে ডেন ব্রাউন, মারিও পুজো বা স্টিফেনের বিশাল মোটা বই ভাড়া নিয়ে সবার সামনে নাড়াচাড়ার করতে করতে দেখি আশপাশ সব পালটে গেছে।
সময়ের তীব্রতা তখন কিঞ্চিত আঁচ করতে শুরু করি। চারপাশ তবু সব রঙিন ছিল। সাদা কাচের চশমা দিয়েও কেমন অদ্ভুত প্রাণময়, রঙিন সব কিছু!
আমার "পদ্মা নদীর মাঝি" পড়ার রোগ ছিল। অসংখ্যবার পড়ি, আরো বেশি পড়ি। দু'এক জনের সাথে পদ্মা নদীর পাড়ে ছোট ঘরে বসে পানির কল কল শব্দ শুনার ফ্যান্টাসি যে করা হয় নাই এমন না। মালার সাথে কুবেরের খুনসুটি ভালই লাগতো, আবার কুবেরের গায়ে কপিলার পানির ছিটা দেওয়ার শিহরণ আমার মধ্যেও কিঞ্চিৎ আসতো বৈকি ! তবে সে অব্ধি-ই। কিছু দিন পর আবার সেই বাউন্ডুলে জীবনে ফিরে আসা। আবার মানুষের গল্পের অধ্যায়ে ক্ষণিক বিচরণ।
সবাই বৈচিত্র্য ধারন করলে, সাধারণ-ই বৈচিত্রতায় রূপ নেয়। এমন একটা সহজ ব্যাপার উপলব্ধি করার মত পরিণত তখন ছিলাম না।
এরি মাঝে কাউকে এক নজর দেখার জন্যে রোদে পুড়ে ব্যস্ত রাস্তার পাশে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার শখ জাগতে শুরু হয়। এটা সম্ভবত আশেপাশের সবার অযাচিত গল্পের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কিংবা অতিরিক্ত রবীন্দ্রনাথ শরৎ পড়ার ফল।
যদিও তখন একটা গোলাপের জন্যে যুদ্ধ করতে হত না। প্রেম এত দুর্লভ ছিল না। রাস্তার মোড়ে ৭/৮ টাকায় মোটামুটি সাইজের লাল গোলাপ পাওয়া যেত, সাদা চাইলে দু চার টাকা বেশি দিতে হত এই যা।
গায়ে পানির ছিটা দেওয়া মোটামুটি ইভটিজিং পর্যায়ে পরে, তবে কিটক্যাট বা ক্যাডবেরি দেওয়া বেশ রোমান্টিক ছিল।
তখন প্রেম মোটামুটি সহজলভ্য হলেও কিঞ্চিত ব্যয়বহুল ছিল।
আমার সম্ভবত দেবদাস পড়ার পরে প্রেমের চেয়ে প্রেমের বিরহের প্রতি একটা চাপা আগ্রহ ছিল। তখনো সিগারেট হাতে উঠে নাই, চিপাচাপায় দু এক টান লুকিয়ে দেওয়া এই যা।
কিন্তু বিরহের ফ্যান্টাসাইজে সিগারেট, এলকোহল সবই থাকতো।
তবে তা যে বেশিদিন টিকতো এমন না। তীব্র ভালবাসার পর তীব্র বিরহ, সব ফ্যান্টাসির পর, 'এসব আমার জন্যে না' ভেবে আবার ভবঘুরে বাউন্ডুলের মত জীবন।
তীব্র সুখই ছিল আশেপাশে। হুটহাট আকাশ দেখা যেত, ইচ্ছে হলে সাগরে ঝাপ, ইচ্ছে হলে পাহাড়ে ছুট। আমার আকাশ ভালো লাগতো, ঘন্টার পর ঘন্টা মেঘের ছুটোছুটি দেখতাম। শীতের সকাল, বিকেলের হাটাহাটি, বর্ষায় পাহাড়ে কাকভেজা ভাল লাগতো। অনেক কাল পর হঠাৎ দেখি সমস্যা হয়ে গেল! তোমারে ছাড়া আর কিছু ভাল লাগে না। এ এক বিরাট সমস্যা হয়ে গেছে।
হাফ প্যান্ট পরে কড়কড়া রোদে সারা দুপুর ফুটবল খেলে সন্ধ্যায় পায়ে দু'একটা ব্যান্ডেজ নিয়ে ঘরে ফিরার বয়সে কয়েকবার যে কাউকে ভাল লাগে নাই এমনও না। পুরাতন বই খাতা ঘাটলে তাদের নিয়ে দু'চার লাইন প্রেমের কবিতা পেলেও পাওয়া যেতে পারে, অসম্ভব কিছু না। তবে তা ঐ পর্যন্তই ছিল!
তারপর বয়স বেড়ে গেছে হু হু করে। আশেপাশে ছড়ানো ছিটানো বই, বেশ কিছু মানুষের গল্প ঠাঁসা মগজ আর বাকেট লিস্টে অপূর্ণ কিছু পরিকল্পনা ছাড়া বেশ-ই তো ছিলাম।
তারপরই সমস্যা হয়ে গেল, তোমাকে দেখার পর বিরাট সমস্যা হয়ে গেল।
তোমার সাথে বাকি জীবন কাটায়া দেওয়ার পরিকল্পনা বা চিন্তাভাবনা ছিল না। আমার বাউন্ডুলে জীবনের অভ্যাস, লাগাম ছাড়া জীবনের ফ্যান্টাসি!
This comment has been removed by the author.
ReplyDeleteগল্পের শুরুটা সুন্দর ❤️
ReplyDeleteশুভকামনা রইলো লেখকের জন্য।
ধন্যবাদ ♥
Delete