জেলনেস্কি সাহেবের আমেরিকা ভ্রমণটা ইন্টারেস্টিং। আরো ইন্টারেস্টিং আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ব্রিফিং। তিনি বলেন,"পুতিনের ডিগনিটি থাকলে য...
জেলনেস্কি সাহেবের আমেরিকা ভ্রমণটা ইন্টারেস্টিং।
আরো ইন্টারেস্টিং আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ব্রিফিং। তিনি বলেন,"পুতিনের ডিগনিটি থাকলে যুদ্ধ এখনই বন্ধ হয়ে যেত!"
তিনি সোশ্যাল শেইম দিতে চাচ্ছেন বুঝা যাচ্ছে!
অথচ রাষ্ট্র হিসেবে যুদ্ধ বিষয়ক ইস্যুতে কি আমেরিকার "সম্মান" আছে?
একজন হুজুর চোর কে নিয়ে স্টেটমেন্ট দিতে পারে,
একজন চোর কি চোরকে নিয়ে স্টেটমেন্ট দিতে পারে?
ব্যাপারটা অনেকটা এমনই।
অবশ্য সবক্ষেত্রেই এখন এমন,
যে চুরি করে সে চোর ধরার জন্যে আন্দোলন করে,
যারা আদর্শ, নৈতিকতা ও সুশাসনের কথা বলে তারাই ধান্দাবাজি করে।
মোটামুটিভাবে বললে একটা ব্যাপারে একমত না হয়ে উপায় নেই যে,
এদেশের বেশিরভাগ মানুষ যারা সুশাসন, বাকস্বাধীনতা, সমতা, আদর্শের কথা বলে,
তারা ক্ষমতা বা পোস্ট পেলে কিংবা তাদের নিজেদের ঘরে/প্রতিষ্ঠানে এসবের চর্চা করে না,
এবং বড় দায়িত্ব পেলে এসব আদর্শ কথা রশি দিয়ে বেঁধে ঘরের মাচায় তুলে রাখবে।
তারা স্রেফ নিজেদের সুবিধার জন্যে, লাভের জন্যে সুবিধাবাদী,
সুবিধা পেলে ডেমোক্রেটিক, সুবিধা পেলে অটোক্রেটিক।
এটা একটা বড় সমস্যা। সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে যায়, কাকে বিশ্বাস করবে বুঝতে পারে না। এটা একটা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি। আমাদের জীবনের মূল ভিত্তিই হচ্ছে বিশ্বাস।
অথচ আমরা নিজের লাভের জন্যে সাধারণ মানুষের জীবন মান উন্নয়নের কথা বলে তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করি।
আর এই কাজ গুলো বেশি করে শিক্ষিত মানুষ গুলো। আজকাল সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ গুলোই সবচেয়ে বড় বদমাইশ। এটা আমাদের একটা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সে যাক,
পৃথিবী জুড়ে নানান যুদ্ধ যেমন মেক্সিকো যুদ্ধ, স্পেন যুদ্ধ, ইরাক, আফগানিস্তান, ভিয়েতনাম, কোরিয়া ইত্যাদি যুদ্ধের মূল প্লেয়ার তারা, অন্য যুদ্ধ বাদ দিলাম যেগুলা আমেরিকা প্রোভোক করে শুরু করেছে, ইউক্রেনটাও এমনই, তারপর হলে হবে চীন তাইওয়ান;
এখন আমেরিকা সুবিধা করতে না পেরে পুতিনের সম্মান নিয়ে কথা বলার আগে ভাবা উচিত ছিল ইতিহাস ঘেটে, তাদের নিজেদের সম্মান কতটুকু আছে।
আসুন দেখি আমেরিকা সরাসরি কোন কোন যুদ্ধ শুরু করে:
মেক্সিকো যুদ্ধ
মেক্সিকো যুদ্ধই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম যুদ্ধ। এটি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেমস কে পোলকের চাপিয়ে দেওয়া একটি যুদ্ধ। ১৮৪৬-১৮৪৮ সালে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই দু’ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২.৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে। এ যুদ্ধের প্রধান কারণ ছিল টেক্সাস। যা এক দশক আগে মেক্সিকোর কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছিল। চূড়ান্তভাবে জয়ী হওয়ার পর মেক্সিকোর ভূখণ্ডের ৩ ভাগের ১ ভাগ আমেরিকার দখলে চলে যায়। মেক্সিকো যুদ্ধে ১৩,২৮৩ মার্কিন সেনা নিহত হয়।
স্পেন যুদ্ধ
১৮৯৮ সালে স্পেনের সঙ্গে যুদ্ধ করে যুক্তরাষ্ট্র। এটি ক্ষণস্থায়ী যুদ্ধ ছিল। একে ইতিহাসের প্রথম ‘গণমাধ্যম যুদ্ধ’ বলা হয়। মনরো মতবাদের প্রেক্ষাপটে মার্কিন কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে এ যুদ্ধ ঘোষণা করে। চার মাস স্থায়ী সেই যুদ্ধে ২,৪৪৫ মার্কিন সদস্য মারা যায়। বিপরীতে প্রায় ১৬,০০০ স্প্যানিশ সৈন্য প্রাণ হারায়। এ যুদ্ধের ব্যয় ধরা হয় ১০.৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ যুদ্ধের ফলে যুক্তরাষ্ট্র ঊনবিংশ শতকের শেষভাগেই একটি বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
জার্মানি যুদ্ধ
১৯১৪ সালে ইউরোপে যুদ্ধ শুরু হয়। একে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বলা হয়। এ যুদ্ধের প্রথম তিন বছর যুক্তরাষ্ট্র নিরপেক্ষ ছিল। ১৯১৭ সালের ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয়। তার ১৯ মাস পর বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়। এ যুদ্ধে ১,১৬,৫১৬ জন মার্কিন সেনা মারা যায়। এতে ৩৮১.৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যুক্তরাষ্ট্র।
ইউরোপীয় যুদ্ধ
১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর পার্ল হারবারে জাপানিদের বোমা বর্ষণের পরদিনই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্রজোটে যোগ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। জার্মানি ও ইতালি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার তিন দিন পরই যুক্তরাষ্ট্রও দেশ দু’টির বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দেয়। ১৯৪৫ সালের মে মাসে ইউরোপীয় যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। আগস্টে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা ফেলার নির্দেশ দেন। যার আঘাতে বিধ্বস্ত হয়ে সে বছরই আত্মসমর্পণ করে জাপান।
কোরিয়ান যুদ্ধ
১৯৫০ সালে কোরিয়ান যুদ্ধের শুরু। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুমান উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীকে দক্ষিণ থেকে উৎখাত করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের সমর্থন নেয়। তৎকালীন মার্কিন জেনারেল ডগলাস ম্যাক আর্থারের কাজকে যুদ্ধ হিসেবে ব্যাখ্যা করে সংঘর্ষে জড়ায় চীন। ডুইট আইজেনহোয়ার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এ যুদ্ধ শেষ হয়। যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৮৯.৮১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়। এতে প্রায় ৩৬,০০০ মার্কিন সেনা মারা যায়।
ভিয়েতনাম যুদ্ধ
এটি মার্কিন ইতিহাসের এক ব্যর্থ যুদ্ধ। ১৯৫৪ সালে ভিয়েতনামিরা ফরাসিদের পরাজিত করে উপনিবেশবাদ যুগের অবসান ঘটায়। ১৯৫৫ সালে আঞ্চলিক একটি সংঘাত থেকে ভিয়েতনাম যুদ্ধ রূপ নেয়। ১৯৬৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর দিয়েমকে হত্যা করা হয়। নতুন সামরিক নেতৃত্বাধীন দক্ষিণ ভিয়েতনামি সরকার ভিয়েতনামিদের সমর্থন হারাতে শুরু করে। ১৯৬০-এর দশকের শেষদিকে যুদ্ধের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জনসাধারণের সমর্থন হারাতে শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ভিয়েতনাম থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় আমেরিকা। ১৯৭৫ সালে দক্ষিণ ভিয়েতনাম কমিউনিস্ট উত্তর ভিয়েতনামের কাছে পরাজিত হয়। এ যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৮৪৩.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়। যুদ্ধে ৫৮,০০০ সেনা নিহত হয়।
ইরাক যুদ্ধ
প্রচলিত আছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে ইরাকে হামলা চালায়। ইরাকের এ সংঘাতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে প্রায় ১ ট্রিলিয়নের বেশি মার্কিন ডলার ব্যয় করতে হয়। সাদ্দামের কাছে ব্যাপক অস্ত্র রয়েছে বলে মার্কিন সেনারা ২০০৩ সালে ইরাকে আক্রমণ করে। দেশটি এখনো সংঘাত ও সন্ত্রাসের ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত। এখন পর্যন্ত সাদ্দাম হোসেনের সেই বিধ্বংসী অস্ত্রের সন্ধান দিতে পারেনি আমেরিকা। ৭ বছর ৫ মাসব্যাপী এ যুদ্ধে ৪,৪১০ জন মার্কিন সেনা মারা যায়।
আফগান যুদ্ধ
২০০১ সালে শুরু হয় আফগান যুদ্ধ যা শেষ হয় ২০২১ সালে। ২০০১ সালে ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বে আল-কায়েদা হামলা চালিয়েছে এমন অভিযোগে আফগান সরকারের কাছে লাদেনকে হস্তান্তর করার আহ্বান জানায়।
ইরান যুদ্ধ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরানের জেনারেল কাসেম সোলেইমানি নিহত হওয়ার পর বিশ্বপরিস্থিতি উত্তেজনাকর পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। ইরান আর আমেরিকার পাল্টাপাল্টি হুমকির মুখে ইরাকে অবস্থিত দুটি মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ইরান ১ ডজনের বেশি ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা চালিয়েছে। সোলেইমানিকে দাফনের একটু আগেই ইরানের স্থানীয় সময় ৮ জানুয়ারি রাত দেড়টার দিকে এ হামলা শুরু হয়। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়েছে, সোলেইমানিকে ড্রোন হামলায় হত্যার জবাব হিসেবে এ হামলা করা হয়েছে। তারা এই অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন শহীদ সোলেইমানি’।
সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট
এ ধরনের মানুষ,
যারা নিজেদের প্যান্ট নিজেরা ফুটো করে অন্য জনের প্যান্ট নাই বলে মক করে,
তাদের উচিত নিজেদের ফুটো প্যান্টের দিকে আগে নজর দেওয়া।
যুদ্ধ নিয়ে মোরাল লেকচার দেওয়ার গ্রাউন্ড যেমন আমেরিকা হোল্ড করে না,
তেমনি অনেক মানুষ আদর্শ নিয়ে কথা বলার গ্রাউন্ড হোল্ড করে না।
তাদের উচিত চুপচাপ থাকা,
নইলে অনেক ছোটদের থেকে মোরাল গ্রাউন্ড সম্পর্কে জ্ঞান নিতে হবে।
No comments