ধর্ষণের কারণ ও ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের স্বরূপ। এটা আপাতদৃষ্টিতে দেখলে দু'টা বিষয় পুরোপুরি আলাদা। তবে এদের মাঝেও একটা সূক্ষ্ম সাধারণ অংশ ...
ধর্ষণের কারণ ও ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের স্বরূপ।
এটা আপাতদৃষ্টিতে দেখলে দু'টা বিষয় পুরোপুরি আলাদা। তবে এদের মাঝেও একটা সূক্ষ্ম সাধারণ অংশ রয়েছে। সেটা হল দু'টার প্রতিবাদকারীর একাংশের মানসিকতা।
যাইহোক,
ফ্রান্সের পণ্য বয়কট নিয়ে আসি।
প্রথমে বয়কট নিয়ে মোটামুটি একটা ব্যক্তিগত প্রচারণা ছিল।
এরপর একদল কমেন্ট করে দিল, ফ্রান্সের সাথে আমাদের ব্যালেন্স অফ ট্রেন্ড নিয়ে কোন আইডিয়া আছে? এসব পণ্য বয়কট করে ফ্রান্সের কিছু হবে না। এরচেয়ে এসব পণ্য বানায়া, মেধা দিয়ে ফ্রান্সকে হারাতে হবে।
শুরু হলো পাল্টা লেখালেখি! উপরের যুক্তিটা অত খারাপ না! তা ছাড়া কেউ কেউ ফ্রান্সের সাথে আমদানি রপ্তানির ডাটা স্ক্রিনশট দিয়ে খুব ভাবসাব নিচ্ছে। তারা জিতে গেছে টাইপ অবস্থা।
এরপর যখন মিডেল ইস্ট ভালমত বর্জন শুরু করলো, তুরস্ক স্টেপ নিল, আল-জাজিরা ভাল কাভারেজ শুরু করলো, তখন দেখা গেল বয়কটে একটু হলেও ফ্রান্স ঝামেলায় পড়ছে।
তখন আবার মাঝে বয়কটের পক্ষে থাকারা মনমরা ছিল, তারা নতুন প্রাণ পেলো! আবার লেখালেখি শুরু, 'বলছিলাম না?' 'হেহে কাজ নাকি হবে না!' ইত্যাদি।
এখন মূলত কাজটা আর বয়কট কেন্দ্রিক নাই! এখন এসব চলতেছে নিজেদের মধ্যে ইগোর লড়াই।
অথচ,
যারা বয়কট শুরু করতে চাইলো বা করলো বা বললো,
তাদের লক্ষ্য, আর যারা মেধা দিয়ে হারাতে চায় তাদের দুজনের লক্ষ্য কিন্তু একই!
ফ্রান্সকে বিপাকে ফেলা বা শাস্তি দেওয়া বা ওদের ছাড়িয়ে যাওয়া।
তাহলে তারা নিজেরা মারামারি শুরু করলো কেন?
উত্তর হচ্ছে এপ্রোচ! তাদের এপ্রোচে সমস্যা!
ফ্রান্সের ঘটনায় মর্মাহত হয়ে তারা ঘৃণা জানানোর পাশাপাশি যদি পণ্য বয়কট করে, সমস্যা কোথায়!
এখন আপনি দেখলেন একদল পণ্য বয়কট করতেছে, আপনি পণ্য বয়কটের চেয়ে ভাল একটা আইডিয়া পেলেন, সেটাও যুক্ত করতেই পারেন! বলতে পারতেন, ভাই আপনারা বয়কট করছেন, এটা তো শর্ট টার্মে হয়ত কাজে আসবে, কিন্তু লং টার্মের জন্যে আমাদের পণ্য উৎপাদন ও মেধার চর্চা করা উচিত। চলেন আমরা দুটাই করি!
তা না করে দিয়ে, তারা লেখালেখি শুরু করলো,
ওসব পণ্য বয়কট করে কিছু হবে না!
বুঝলাম আপনার ভাল একটা প্ল্যান আসছে, তার মানে যে আগেরটা ভুল বা কাজে আসবে না এমন কেন ভাবছেন!
কেন নিজেরটাই সেরা ভাবছেন! এখানে কে সেরা কার প্ল্যান সেরা এটার তো যুদ্ধ হচ্ছে না! ভাই একটা কোন Idea Contest না!
তো যেহেতু এরা আগের প্ল্যানকে ভুল বলছে, আগের টিম পার্সোনালি নিয়ে ফেললো। যেহেতু তারা বেশি মর্মাহত, তারা ইমোশনাল হয়ে গেল, পরে যখন তুরস্ক বা আল-জাজিরার নিউজ পেলো, তারাও পার্সোনালি এটাক শুরু করলো!
এই হচ্ছে আমাদের অবস্থা!
তো এটার সাথে ধর্ষণের কারণের সম্পর্ক কী?
সলিড প্রশ্ন।
দেখেন,
যখন একটা মেয়ে রেইপ হয়, আর আপনারা লিখেন বা বলেন শুধুমাত্র ২/৩ লেয়ারের কাপড় পড়লে আর রেইপ হত না তখনো ব্যাপারটা ইন্সট্যান্ট ইমোশনে আঘাত করে। কারণ মাত্রই সে বা তার কেউ রেইপ হলো। আবার আপনি তাকেই পরোক্ষভাবে দোষ দিচ্ছেন।
ধর্ষণের অনেক অনেক কারণ আছে, তার মধ্যে কাপড় ও একটা হতে পারে,
কিন্তু আপনারা অন্যান্য কারণ গুলো সরাসরি নাকচ করে দিচ্ছেন,
যেমন ভাবে তারা বয়কটের ধারণা নাকচ করে দিচ্ছিল।
ভাই, একটা ওয়ে, একটা কারণ,
এই একটাকে একমাত্র কেন ভাবছেন!
'একটা' আর 'একমাত্র' সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটা শব্দ!
আপনারা বলতে পারেন,
ধর্ষণের অনেক কারণ আছে, কাপড়ও একটা।
অথচ আপনারা ধর্ষণের অন্যান্য কারণ থাকতে পারে এটা স্বীকারই করতে চান না!
তা ছাড়া পুরুষ যখন নারীকে ধর্ষিত না হতে কয়েক লেয়ারের কাপড় পড়তে পরামর্শ দেয়, তখন পুরুষেরই লজ্জিত হওয়া উচিত।
কারণ তার মানে দাঁড়ায় অনেক কাপড় না পড়লে যে পুরুষ(কমন অর্থে) আবৃত করতে উপদেশ দিল সে পুরুষই (কমন অর্থে) নারীকে ধর্ষণ করবে!
আপনি যা জানেন সেটাই সঠিক ভাববেন না!
আপনার বয়স ২০-২২! কীই বা জানেন আপনি? আরো জানেন, আরো পড়েন, আরো গবেষণা করুন। তারপর কারো ইগো হার্ট না করে, কাউকে মনে কষ্ট না দিয়ে সবাইকে বুঝান।
আপনার ভাল থাকার উপদেশের ভঙ্গিতে যদি কেউ উপদেশ গ্রহণ করবে দূরের কথা মনে কষ্ট পেয়ে বসে, তাহলে আপনি সে অপদার্থ গোছের লোক,
আপনাকে দিয়ে প্রচার, প্রসার বা রক্ষা হবে না। বরং ক্ষতি হবে। হয় পাবলিক স্পিকিং বা লেখালেখির দক্ষতা অর্জন করুন না হয় বিদায় নিন। এসব আপনার জন্যে না।
এপ্রোচটা বদলান,
দেখেন আপনারা এক হতে পারবেন,
সেটা বয়কট সফল করতে,
কিংবা ধর্ষণ রুখতে।
কিংবা সব অপরাধ রুখতে।
আপনার ভালো কাজের জন্যে শুভকামনা রইলো।
বিষয়টা বিবেচনার এবং খুব ভালো লাগলো কথা গুলো
ReplyDelete