সোশ্যাল ওয়ার্কের কিছু বিভিন্নতা আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দু'টা হলো কয়েকজন সংগঠিত হয়ে কোন স্পেসিফিক ইস্যুতে সেল্ফ মোটিভেটেড কিছু ব্যক্ত...
তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দু'টা হলো কয়েকজন সংগঠিত হয়ে কোন স্পেসিফিক ইস্যুতে সেল্ফ মোটিভেটেড কিছু ব্যক্তি কাজ করে, অন্যটা হলো কোন NGO এর সাথে ভলেন্টারি বা কোন ভাবে যুক্ত হয়ে সামাজিক কাজে যুক্ত হয়।
যদিও ভেবেছিলাম সংগঠন নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখব,
একজনের বিশেষ অনুরোধে সেটা বাদ দিয়েছিলাম।
তবে কিছু ইস্যুতে অনিয়মিত লেখালেখি করা যায়।
প্রথম মত আমি বেশি অনুপ্রাণিত হই যখন দেখি কয়েকজন মিলে কোন সামাজিক কাজ করার চেষ্টা করছে। তারা তাদের এলাকায় স্পেসিফিক ইস্যু গুলো বাছাই করে সরাসরি কাজ শুরু করতে পারে। এবং এক্ষেত্রে সাফল্যের পরিসংখ্যান ভাল। তবে যতক্ষণ না প্রচারেই প্রসার ভাবা না হয়। অবশ্য যেহেতু নিজেরাই কাজ করে। তারা নিজেরাই টাকা ব্যয় করে বা সংগ্রহ করে। এক্ষেত্রে সংগ্রহ যে খুব বেশি হয় এমন না। বেশিরভাগই তাই টাকা ব্যয় করাতে অনেক বেশি সচেতন হয়। তাই আর্থিক অপচয় কম হয় তুলনামূলক।
তবে এখানে একটা সংকটের জায়গা হলো, তাদের বাৎসরিক কার্যক্রম হাতে নেওয়ার আর্থিক সক্ষমতা কম থাকায় ছোট ছোট ইস্যু নিয়েই কাজ করতে আগ্রহী হয় এবং এতে সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। তবে এর মাঝেই কিছু কিছু সংগঠন ৫/৭ বছরের বেশি সাস্টেইন করে ফেলে। তারা ভাল পরিবর্তন আনতে পারে।
আমি তাদের এই জন্যে পছন্দ করি যে,
তাদের বেশিরভাগের এখান থেকে পাওয়ার তেমন কিছু থাকে না, এটা তারা জানে। তাই পুরোটাই করে প্যাশন থেকে। তারা ভুল করতে পারে, তবে খারাপ কিছু করে না। বা বাৎসরিক হিসাব মেলানোর কোন তাড়া থাকে না। স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারে। আর নিজেরাই বন্ধুবান্ধব থেকে অল্পস্বল্প অর্থ সংগ্রহ করে কাজ করে বিধায় কাউকে খুশি করতে কাজ করা লাগে না।
এটা অনেক জটিল একটা ব্যাপার। যাদের কাজের অভিজ্ঞতা নেই, তারা হয়ত এর গভীরতা ধরতে পারবেন না।
এরপরেই আসে যারা NGO এর সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করে।
এখানে কিছু মাল্টিপল ইস্যু চলে আসে৷ প্রতিটা এনজিওর নিজস্ব কিছু এজেন্ডা থাকে। তাই আপনাকে ওভাবেই কাজ করতে হবে। এখানে কাজ করা তুলনামূলক সহজ। কারণ এখানে আপনাকে স্রেফ কাজ করতে হবে। নেতৃত্ব দিয়ে আগানো লাগবে না। এর মাঝে যারা অতিমাত্রায় নেতৃত্বে কথা বলে, ওসবের বার আনাই মিছে। কাজের কিছু স্বাধীনতা আর নেতৃত্বের পরিবেশ সৃষ্টি এক না। পরিবেশের একটা উপাদান হলো স্বাধীনতা। আরো অনেক জরুরি উপাদান আছে। আর যারা সারাদিন স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলে, স্বাধীনতা পেয়ে গেলে সবার আগে তারাই অপরের স্বাধীনতা হরণ করে।
তবে নেতৃত্ব শব্দ বেঁচে ভাল বাজার পাওয়া যায়, নানান সংগঠন এটা ব্যবহার করার চেষ্টা করে থাকে।
যারা এসব গাল ভরা কথা বলে, তাদের একটু পর্যবেক্ষণে রাখলেই বুঝবেন, সেখানেও দুই ক্যাটাগরির মানুষ আছে। এক ক্যাটাগরি হলো সে আসলেই জানেনা যে সে ঠকাচ্ছে বা বিক্রি করতেছে। অপরপক্ষ হচ্ছে জেনে শুনে চুপ থাকে। তারা বলে, আমি চোখ বন্ধ করে আছি, ১০ মিনিটে যা করার করে ফেল টাইপ।
তবে সবাই এমন, ব্যাপারটা এমন না।
কেউ কেউ আসলেই নেতৃত্বে বিশ্বাস করে ও সুযোগ করে দেয়।
এখানে আবার যেহেতু চাকরির ব্যাপার আছে, তাই কর্মকর্তাদের অনেক কিছুই কম্প্রোমাইজ করেই কাজ করতে হয়। এটাকে আমি অক্ষমতা ভাবি না, কিঞ্চিৎ বাস্তবতা মনে করি। সমস্যা কম্প্রোমাইজে না, সমস্যা হলো কম্প্রোমাইজ করলে সেটা ঢেকে ভুলবাল না বলাই ভাল। মিথ্যা বলা ও প্রদর্শন করলেই বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
এখানে আপনাকেই চুজ করতে হবে। কারণ এখন নেতৃত্বের গুণাবলি নেতা বানায় না, পোস্ট নেতা বানায়।
সে যাক, যারা এনজিওতে যুক্ত হয়ে কাজ করে,
তাদের মধ্যেও কিছু ক্যাটাগরি থাকে।
কেউ স্রেফ এনজিওতে যুক্তই হয় সার্টিফিকেট এর আশায়। ওরাই অধিকাংশ এনজিওর পছন্দের মানুষ। কারণ তারা খুব একটা মাথা ঘামায় না, সার্টিফিকেট পেলেই খুশি। মাস বা বছরখানেক কাজ করে খালাস৷ আবার এনজিওর ও ক্যাচল হয় না। দু'পক্ষের সুখের সংসার।
পরের ক্যাটাগরিতে একটা প্রোফেশনালিজম থাকে। তারা মন প্রাণ দিয়েই কাজ করে সোসাইটির জন্যে। তো তারা যেহেতু কাজ করছে বছরের পর বছর, তাদেরও কিছু প্রাপ্যের প্রয়োজন আছে। সেটা সার্টিফিকেট বা অন্য যা ই হোক। এবং আমার এটাকে যথেষ্ট যুক্তি সংগত মনে হয়।
অন্য ক্যাটাগরিতে আছে কিছু ভাল ও বোকা মানুষ। তারা গালভরা কথা শুনে এনজিওকে দূত ভেবে বসে । এদের ইউজ করা মোটামুটি খুবই সহজ। তাদের এডুকেশন লেভেল খুব একটা বেশি হয় না।
সে যাই হোক,
সকল অনগ্রসরতায় এনজিও গুলোর অসাধারণ ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না।
সে যাক,
পাড়ায় পাড়ায় গড়ে উঠা সংগঠন গুলোর উচিত সামাজিক বিজনেসে কনভার্শন শুরু করা। নিজেরা অর্থ উপার্জন করার চেষ্টা করে লাভের একটা অংশ সামাজিক কাজে ব্যয় করা। মানুষের বা নিজের জমানো টাকা দিয়ে বেশিদিন কাজ করা যায় না।
আর,
প্রতিটা এনজিওর উচিত বাৎসরিক আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করা। যেমনটা পাবলিক লিমিটেড কর্পোরেশন গুলো করে থাকে। এটা খুবি যৌক্তিক ও সময়ের দাবি।
No comments