এই তো বেশ কিছু বছর আগেই, তীব্র মন খারাপ হলেই সব কাজটাজ ছেড়ে দিয়ে বিবর্ণ ব্যাগ কাঁধে নিয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়তাম। যেখানে ইচ্ছা চলে যেতাম। ...
এই তো বেশ কিছু বছর আগেই,
তীব্র মন খারাপ হলেই সব কাজটাজ ছেড়ে দিয়ে বিবর্ণ ব্যাগ কাঁধে নিয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়তাম। যেখানে ইচ্ছা চলে যেতাম। বাসে বা গাড়িতে উঠে যেখানে ভাল লাগতো নেমে হাঁটাহাঁটি করতাম। কোন নিম্নমধ্যবিত্ত পাড়া খুঁজে বের করে এক কাপ চা হাতে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানুষ দেখতাম, তাদের কাজ, কথাবার্তা, তর্ক শুনতাম।
এই মানুষগুলোর জীবনধারণ আমাকে ভিন্ন কোন মনস্তাত্ত্বিক জায়গায় নিয়ে যায়। ১০ টাকার তেল, তিনটা পেঁয়াজ কিংবা কুমড়ার চার ভাগের এক ভাগ কিনে বাজার করার যে তৃপ্তি তারা পায়, এটা অন্য কোথাও দেখা যায় না।
আলুর দাম ১ টাকা কমানোর জন্যে তারা যে এফোর্ট দেয়, এতটা সম্ভবত আমরা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে বা কাজেও দেই না। হয়ত এই ১ টাকা বাঁচানোই তাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার!
সেখানে আরেকটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার হল ঝগড়াঝাটি। সাধারণ একটা ব্যাপারে তারা তুলকালাম বাঁধিয়ে ফেলে, আবার কিছুক্ষণ পর সব ঠিকঠাক! তারা মুখে যত সবর, অন্তরে ততটা না। বরং তারা ঝগড়া মুখ অব্দি রাখে, অন্তর অব্দি পৌঁছুতে দেয় না। তাই যতই ঝগড়া হোক, কিছুক্ষণ পর সব ঠিক। এই মানুষগুলার হৃদয় বোধহয় আমাদের চেয়ে অনেক ভাল।
আমরা মুখে মধু ঝরাই, আর হৃদয় ভর্তি ঘৃণার বিষ। আমাদের প্রায় সবার অন্ততে অপরের প্রতি রাগ, ঘৃণা এত বেশি যে, বিন্দুমাত্র ভালবাসার অবস্থান নাই - অন্তত প্রিয় মানুষকে দিতেও!
কী এক বিশ্রী জীবন আমাদের!
আমি মন খারাপ হলেই ছুঁটে যেতাম সেসব জায়গায়। চায়ে চুমুক দিয়েই আমার মনে হত, এই সামনে যা দেখছি তা বাস্তব না! এটা একটা বিশাল বড় সিনেমার একেকটা সিন!
মাঝেমধ্যে মনে হয় আমিও সেই সিনেমার একটা চরিত্র, যার একমাত্র কাজ অন্য চরিত্রের দিকে খেয়াল রাখা!
বৃষ্টি হলে ছাতা ফেলে মোবাইল মানিব্যাগ পলিব্যাগে মুড়িয়ে, রাস্তায় কিংবা পাহাড়ে হাঁটার মত দু:খ বিলাস আর হয় না।
কী এক বিশ্রী ভাবে বেঁচে আছি!
এখন মন খারাপ হওয়ার অবকাশ কম। তাও যা হয়, নানান বিধিনিষেধের কারণে প্রকাশ করা হয়ে উঠে না। আজকাল সুখের চেয়ে দু:খ প্রকাশ বেশি জটিল হয়ে পড়ছে। অথচ আমাদের সুখের চেয়ে শোকে বেশি ভাসি।
এক তীব্র অচেনা সময় চলছে পৃথিবী জুড়ে। এখানে কেউ ভাল না থাকলেও হাসে;
কাউকে পছন্দ না করলেও জড়িয়ে ধরে! মাথা উঠিয়ে চাঁদ না দেখে ভরা পূর্ণিমায় মোবাইলের এপ্লিকেশন দিয়ে দেখে!
এই ভুলে ভরা সময় আটকে যার প্রাণ ছটফট করেই সেই বুঝে, দম ফেলা কত বিতৃষ্ণার!
No comments