গলিতে হাঁটছিলাম। হঠাৎ দেখি একজন মোবাইলে কমপ্লেইন করছে,'আমার দেওয়া ড্রেস পরে সে আরেক ছেলের সাথে আজকে ডেটে গেছে'। বয়স বাড়ছে, ভাবলাম আ...
গলিতে হাঁটছিলাম। হঠাৎ দেখি একজন মোবাইলে কমপ্লেইন করছে,'আমার দেওয়া ড্রেস পরে সে আরেক ছেলের সাথে আজকে ডেটে গেছে'। বয়স বাড়ছে, ভাবলাম আজকে ব্যক্তিগত কিছু নিয়ে লিখি। মানুষ আমাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যায় পড়ে সেটা হলো, আমাকে ডিকোড করতে পারে না।
আমাকে দেখে বুঝে না আমার মাথায় কি চলছে, কি করতে চাচ্ছি বা আমি কী চাচ্ছি!
এর ফলে কিছু ঝামেলা পাঁকিয়ে ফেলে।
যাদের ভাল লাগে, তারা ভাবে আমি তাদের পছন্দ করি না, যাদের পছন্দ করি না, তারা ভেবে বসে থাকে আমি পছন্দ করি। আমি সাদা ভাত চাইলে তারা ভাবে কাচ্চি!
আমি সরে আসতে চাইলে ভাবে আমি তীব্র ভাবে আঁকড়ে আছি, আমি তীব্রভাবে আঁকড়ে থাকলে ভাবে আমি নাই! আমি এসব চিন্তাভাবনায় ছেদ করি না, যে যা ভাবে আমি তাতেই সই।
যে দু'একজন মানুষ ঠিকঠাক ডিকোড করতে পারে, তাদের সাথেই থেকে যাই। যদিও আমাকে সহ্য করা কঠিন।
সে যাক, একজন ভালবেসে ড্রেস গিফট করলে সেটা পরে অন্য জনের সাথে ডেটে যাওয়া যাবে কিনা!
এটা নিয়ে একসময় অনেক আলোচনা হত, আমিও যুক্ত থাকতাম মাঝেমধ্যে।
আমার মনে হয়, আমার কী মনে হয় সেটায় পরে আসি। আগে দেখি আমরা গিফট কেন করি।
আমরা নানান কারণে গিফট করি।
কিছু গিফট থাকে এমন যে, ড্রেসটা দেখেই মনে হয় এই জামায় তাকে অনেক সুন্দর লাগবে!
কিছু গিফট ডিপ্লোম্যাটিক, সম্পর্ক উন্নয়নের জন্যে বা কোন বেনিফিশিয়াল ইস্যু মাথায় রেখে দেওয়া হয়, কিছু গিফট দেওয়া লাগবে তাই দেওয়া!
আমার মনে হয়, গিফট যখন দেওয়া হয়, তখন কিছু ফ্যাক্টর কাজ করে। যেমন - স্বত্ব ত্যাগ করেই দেওয়া হয়। যার হাতে গিফট সে তার মালিক। এবার সে এটা কখন পরবে, কখন পুড়িয়ে ফেলবে সেটা তার ব্যাপার। সোজাসাপ্টা কথা এটাই।
তবুও যে গিফট দেয়, তার একটা এক্সপেকটেশন থাকতে পারে। এ জন্যে দেখা যায় আমরা সেটা কনসিডার করে ছোট হয়ে যাওয়া জামা আগলে রাখি, নতুন ঘড়ি বাদ দিয়ে রঙচটা ঘড়ি পরে হাঁটি!
আবার আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, আমরা গিফট দেই এই ভেবে যে, যে পাবে সে খুশি হবে! আমার মনে হয় এটাই মূখ্য। খুশি বা সুখটাই সব। এই ড্রেসে যদি সে অন্যকারো সাথে ঘুরে সুখ পায়, ক্ষতি কী!
মানুষটাই সব। সে যেখানে যার সাথে সুখ পায় সেখানেই সুখে থাকুক।
ব্যক্তিগতভাবে ব্যাপারটা আমার সাথে ঘটলে, ইমেডিয়েটলি কী রিয়েকশন করতাম শিউর না, তবে আমার মনে হয় আমার এই ইস্যুতে এক ডায়মেনশনে ভালই লাগত। হ্যাঁ আমাকে ছেঁড়ে গেলে আমার হয়ত এমনই খারাপ লাগত। কিন্তু আবার তার সুখের দিনে সবচেয়ে পছন্দের জামাটা চুজ করবে, আর সেটা আমার দেওয়া এটা ভেবে সুখ সুখ লাগতো। আমরা অবশ্য মাঝেমধ্যে ইমোশনাল হয়ে কিছু ভুলবাল বকে ফেলি, দিন শেষে ঠিকি তার সুখ কামনা করি।
আমি 'গার্ডিয়ান এঞ্জেল'র বিশ্বাস করি।
পাশে না থাকুক, কথা না হোক; তবুও কিছু মানুষ দূর থেকে পাশে থাকে, টেক কেয়ার করে। বলে কয়ে না হোক, না জানিয়েই অনেক সাপোর্ট করে যায়।
যাকে করে, সে হয়ত না জেনে বলে, ভাগ্য ভাল! আসলে তার ভাগ্যে একজন গার্ডিয়ান এঞ্জেল আছে!
সে যাক, পরীমনির নাকি সম্পর্ক ভাল যাচ্ছে না। এটা নিয়ে যে ছেলেমেয়ে ট্রল করছে তার বাপ-মার সম্পর্কও ভাল না, তার ব্যক্তিগত জীবনের সম্পর্কও ভাল যাচ্ছে না। এমন অনেকজনকেই চিনি।
এই যে এত এত ডিভোর্স, সংসারে অশান্তি এর অন্যতম কারণ মনে হয় মানুষ নিজের পছন্দকে বুঝতে পারে না। কতশত মানুষ ভুল মানুষকে বিয়ে করে বসে আছে, ভুল মানুষের সাথে সম্পর্ক করে বসে আছে। তারা জানে, তবুও বের হওয়ার সাহস করে না, শুরুটা আটকাতে পারে না।
পারিবারিক চাপ, সামাজিক প্রেশার, অর্থনৈতিক কারণের পাশাপাশি নিজেকে বুঝে নিজের জন্যে ভালটা ঠিক করতে পারে না।
সুখ কোন কালেই ছিল না, আগের যুগে মেয়ের/মা'রা চুপচাপ কষ্ট পাইতো, মুখ বুঝে সহ্য করত বলেই কি ভাল ছিল ধরে নেওয়া যাবে?
বরং এখন ভাল হচ্ছে, আগে মদ্যপ স্বামী হলেও, দিনরাত মারধর করলেও ডিভোর্স এর কথা চিন্তাও করত না, কিন্তু এখন ঠিকই বের হয়ে আসে টক্সিক সম্পর্ক থেকে।
এটাই ভাল। এটাকে এপ্রিশিয়েট করা উচিত। মুখ বুঝে সহ্য করতে মোটিভেট করা অন্যায়। এটা নিয়ে হুটহাট কমেন্ট করার আগে নিজের ফ্যামিলির দিকে তাকান। বুঝতে পারবেন।
সে যাক,
আমাদের স্কুল কলেজে নানান বিদ্যা শিখায়, মানুষ চেনা শিখানো হয় না, হয় না নিজেকে চিনার বিদ্যা শিখা।
তাই আমরা নিউট্রন বোমা বুঝে ফেলি, মানুষ বুঝি না।
সম্পর্ক ব্যাপারটা জটিল, আরো জটিল ভালবাসা বা পছন্দ। আমরা প্রায়শই এমন একজনকে ভালবেসে ফেলি, ভাল লেগে যায়, যেটা সম্ভব না; এটা মেনে নেওয়াও একটা গুণ। আবার ভালবাসা মানে যে একসাথে থাকা এমন না। দূরে থেকেও ভালবাসা যায়, দূরে থেকেও পাশে থাকা যায়৷
ভালবাসা আবার সম্পর্ক দুটা আলাদা ব্যাপার। আমরা প্রায়শই যার সাথে থাকি, তাকে সবটা দিয়ে ভালবাসা যায় না। আবার যাকে সবটা দিয়ে ভাল লাগে তার সাথে থাকা যায় না।
আবার, সম্পর্ক কোন লিগ্যাল ডিল না যে ছিন্ন করলে জেল জরিমানা হবে। ব্যাপারটাতেও ইউজড টু হতে হবে।
আমার মনে হয় কি, ভালবেসে ফেললে, সেটা সম্ভব হোক আর না হোক, বলে ফেলা উচিত, এটা খুবই স্বাভাবিক যে আমি তোমাকে ভালবাসি, তুমি বাস না, বা আমরা দুজনেই দুজনকে ভালবাসি কিন্তু একসাথে থাকা সম্ভব না। এরপরেও পাশাপাশি থাকা যায়, হাঁটা যায়। আড্ডা দেওয়া যায়!
অথচ আমরা উলটা করি, ভালবাসলেই লুকিয়ে ফেলি, মিথ্যা বলি, এড়িয়ে যাই, আর ছাঁইপাশ ব্লক টল্ক তো নিত্যদিনের ব্যাপার।
আমরা যত সহজে ঘৃণা প্রকাশ করতে পারি, তত সহজে ভালবাসা প্রকাশ করতে পারলেই সব সুন্দরভাবে পালটে যেত।
২০২৩ সালে মানুষ ভালবাসা প্রকাশ করতে শিখুক, সম্পর্ক আর ভালবাসা আলাদা করতে পারুক, টক্সিক/অসুখের সম্পর্ক থেকে বেড়িয়ে আসার সাহস করুক, নিজের সুখ চিনুক।
২০২৩ সালে মানুষ নিজের কাছে মিথ্যা বলা বন্ধ করে, ভালবাসা ছড়াক।
আসছে বছর ভালবাসাময় হোক।
No comments