আন্তর্জাতিক রাজনীতি একটা স্নায়ুর খেলাও বটে। ট্রাম্প মোদিকে চাপ দিতে গিয়ে নিজেই চাপে পড়েন। সম্প্রতি চীনের সামরিক শক্তি প্রদর্শনের কারণ...
আন্তর্জাতিক রাজনীতি একটা স্নায়ুর খেলাও বটে।
ট্রাম্প মোদিকে চাপ দিতে গিয়ে নিজেই চাপে পড়েন। সম্প্রতি চীনের সামরিক শক্তি প্রদর্শনের কারণে মূলত ট্রাম্প প্রেশারে পরেন। মোদি পুতিনের ক্রস ফিংগার করে হাটাহাটি, একই গাড়িতে চড়া ইত্যাদি ট্রাম্পকে একটা ইন্টার্নাল ক্যুয়ের দিকে ফেলে দিয়েছে। একদিন আগেই ট্রাম্প ইন্ডিয়াকে চীনের কাছে চলে যাওয়া নিয়ে পোস্ট করলেও, একদিন পরেও সুর বদলাতে বাধ্য হোন। ট্রাম্প বছর তিনেক পরে বিদায় নিলেও, তার কার্যকালাপে যে ড্যামেজ হচ্ছে, এইটা পোষাতে আমেরিকার যথেষ্ট বেগ পাওয়া লাগবে। যেমনটা সৌদির ক্ষেত্রে হচ্ছে। জামাল খসেগী হত্যাকাণ্ড ইউজ করে ভোট ব্যাংক বাড়ানোর যে স্টেপ বাইডেন নেন, তার ফলে সৌদি আমেরিকা বলয় থেকে চীন বলয়ে চলে যায়, এই ধারা ট্রাম্প অনেক চেষ্টা করেও পোষাতে পারেন নাই।
এখন মূলত ট্রাম্প ড্যামেজ কনট্রোল করার চেষ্টা করছেন। তবে ব্যাপারটা অনেকদূর গড়িয়েছে-
১। চীন ভারতকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে। SCO, BRICS ইত্যাদিতে ভারতকে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
২। রাশিয়া ভারতের ঐতিহাসিক বন্ধু, রাশিয়া ভারতকে আরো বেশি সুবিধা দিচ্ছে।
৩। চীন রাশিয়া ভারতকে সেকেন্ড লেয়ারে না রেখে নিজেদের কাতারেই রাখছে। এইটা ভারতের জন্যে সম্মানের।
৪। ট্রাম্পের আপাতত তেমন বন্ধু নাই। যা আছে তা হলো- স্ট্রাটেজিক পার্টনার। ইভেন ইউরোপও। বাট চীনের দিকে তাকালে দেখবেন, বন্ধু দেশের অভাব নাই!
এখানে যদি চ্যালেঞ্জ গুলো দেখেন-
১। ভারত চীনের অরুনাচল, কাশ্মীর, তিব্বত নিয়ে সমস্যা থাকলেও এগুলা মাইনর সমস্যা। আবার এসব ইস্যুতে আমেরিকার স্টেক আছে, তাই ভারত সমস্যা মিটালে আমেরিকাকে স্ট্রেস দিতে পারবে + চীন বেশি বিশ্বাস করবে।
২। ভারত পাকিস্তান এর যে ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব আছে, এইটাও চীন চাইলে দ্রুত সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারে। তবে মোদির কট্টর জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে এইটা করা টাফ হবে। তবে অসম্ভব না। ইরান সৌদি, হামাস PLO এর উদাহরণ।
৩। পাকিস্তানকে চাপে ফেলতে ভারত আফগানিস্তানের সাথে সম্পর্ক বাড়ালেও, দুজনেই যেহেতু চীনের সাথে যুক্ত, চীন এখানেও ইন্টারফেয়ার করতে পারবে।
৪। আন্তর্জাতিক বিশ্বে রাশিয়ার যে অসময় চলছে, এইটা একটা চ্যালেঞ্জ। তবে চীনের কল্যানে রাশিয়া ভালই আগাইছে। এখন ইউক্রেন ইস্যুতে পুতিনের চেয়ে জেলনেস্কির দায় বেশি দেওয়া হচ্ছে।
৫। বৈশ্বিক বাজারে রাশিয়ার যে সম্পদ আটকে রাখা হয়েছে, তা রাশিয়া ইউক্রেনের কিছু অংশ দখল করতে পারলে দ্রুতই তুলে ফেলতে পারবে। এই ব্যাপারে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে রাশিয়ার কিছুটা ইমেজ ডাউন হবে। তবে গ্লোবাল সাউথের রাষ্ট্র গুলায় চীন ও ভারতকে দিয়ে ম্যানেজ করা গেলে ইজ্জত রক্ষা হবে। টাকাও আসবে।
এখন ট্রাম্প কী করতে পারেন?
১। রাশিয়া চীনের উপর আরো আগ্রাসী হতে পারেন। ইউক্রেনে আরো বেশি অস্ত্র দিতে পারেন, সরাসরি ন্যাটোকে যুক্ত করার সম্ভাবনা আছে, তবে ইউরোপ এখন ট্রাম্পকে সেভাবে বিশ্বাস করতে পারছে না, তাই এইখানে ঝামেলা হবে।
২। ইন্ডিয়ার উপরে চাপ প্রয়োগের কথা বলছেন আবার বন্ধুত্বের কথাও বলছেন। এখনো বুঝা যাচ্ছে না তিনি কী করবেন। তবে আমার মনে হয় ব্যাপারটা তিনি হ্যান্ডেল না করে প্রশাসনের উপর ছেড়ে দিতে পারেন। তবে এখন আমেরিকা ব্যাকফুটে যাওয়া মানেই ভারত আরো শক্তিশালী হওয়া। হয়ত ভারত আমেরিকা থেকে আরো বেশি সামরিক সরঞ্জাম পেতে চলছে আগামীতে।
৩। মোদির জনসমর্থন ট্রাম্পের জন্যে একটা সমস্যা। ভারতের জনগণ ট্রাম্পের জন্যে এখন আরো বেশি সংগঠিত। মোদির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। পরবর্তী নির্বাচনে তাই আমেরিকার হস্তক্ষেপ করার একটা বড় সম্ভাবনা রয়েছে।
৪। সবচেয়ে বড় ড্যামেজ হবে ইউক্রেনের। যে স্টেপই নেওয়া হোক, ইউক্রেন হয়ত জমি ছাড়বে অথবা আরো বেশি যুদ্ধবিধ্বস্ত হবে। শংকায় আছে ইউরোপও!
সামনের কয়েকমাস আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভালই নাটক চলবে। এইটা শুরু হতে পারে ভেনিজুয়েলা দিয়েই।
সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী - ভেনিজুয়েলার কাছে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে আমেরিকা। এবং রাশিয়া ভেনিজুয়েলাকে ড্রোন দিয়েছে। বৃহস্পতিবার ভেনিজুয়েলা আমেরিকার যুদ্ধ জাহাজের উপর দিয়ে F16 যুদ্ধবিমান উড়িয়েছে।
ইরান যুদ্ধ থামার পর চীন ইরানে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও মিসাইল পাঠিয়েছে।
সম্ভাবনা আছে ভেনিজুয়েলা যুদ্ধ শুরু হলে তাতে একটা বড়সড় প্রক্সিওয়ার শুরু হবার।
দেখা যাক কী হয়!
No comments