Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Pages

Recent Writings

{latest}

অনলাইন কোর্স ও আমাদের রসিকতা।

বর্তমানে করোনার সুবাদে ই লার্নিংয়ের চাহিদা প্রচুর বেড়েছে। এই প্ল্যাটফর্ম গুলো পেইড প্রোমোশনও করছে বেশ। সবাই মোটামুটি কোর্স করছে। এর পা...




বর্তমানে করোনার সুবাদে ই লার্নিংয়ের চাহিদা প্রচুর বেড়েছে। এই প্ল্যাটফর্ম গুলো পেইড প্রোমোশনও করছে বেশ। সবাই মোটামুটি কোর্স করছে।
এর পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটা আমাকে পরিচিতরা করছে সেটা হলো, এই কোর্স সার্টিফিকেট গুলোর আসলেই ভ্যালু রয়েছে কিনা।
মজার প্রশ্ন। আমি একটা মোটামুটি মানের সার্ভে করার চেষ্টা করেছি।  বিভিন্ন কোম্পানিতে যারা জব করছেন, এইচআর সেকশনে জব করছেন, বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক ইত্যাদি ডাইভার্সড সেক্টর থেকে তথ্য নিয়েছি। এর পাশাপাশি আর্কাইভ রিসার্চের মত নিউজ পোর্টাল ঘাটাঘাটির চেষ্টা করেছি।
যাইহোক,
প্রথমেই আসি, এই প্রশ্নটাই সত্যি বলতে গোলমেলে। আপনি কি চান সেটা স্পষ্ট না। আপনি কি সার্টিফিকেটের ভ্যালুয়েশন চাচ্ছেন নাকি অর্জিত জ্ঞানের? দুটায় মিল থাকলেও পার্থক্যও আছে।

হিস্ট্রি ঘেটে যদি বলি, একসময় কোন পরীক্ষায় ফেল করাকেও যোগ্যতা হিসেবে দেখা হত। এবং সেটা ভাইভায় বা জবে বলা হতো। আমি অমুক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এত নাম্বার পেয়ে ফেল করি।
তখন দেখা যেত, যে ফেল করে তারো চাকরি বা ব্যবসা সামলানোর মত জ্ঞান আছে! অর্থাৎ তখন পাশ করা বেশি কঠিন ছিল। একদম মেধাবী ছাড়া দুই নাম্বারি করে পাশ প্রশ্নই আসেনা।
আস্তে আস্তে পাশের সংখ্যা বাড়ে, সচেতনতা কিংবা মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তন, সে বিতর্কে যাচ্ছিনা,
পাশ বাড়ার পর দেখা গেল, যারা পাশ করছে ওরা ভাল করছে জবে বা ব্যবসায়। ফেল করলে ভাল করছে না।
তখন সার্টিফিকেট ভ্যালুয়েশন শুরু হলো।
এরপরে আসে প্রশ্ন ফাঁস, জালিয়াতি, মূল্যায়নের মানের ডিভ্যালুয়েশন ইত্যাদি। তখন দেখা যায় একজন সার্টিফিকেট থাকলেও কাজের কাজ হচ্ছেনা। জব বা ব্যবসায় ভাল করতে পারছেনা
তখন শুরু হয় সার্টিফিকেটের অবমূল্যায়ন। সার্টিফিকেট থাকলেও আর তেমন মূল্যায়িত হচ্ছেনা। তখন আবার সেই ঘুরে প্রথম পর্যায়ে, সার্টিফিকেট থাক না থাক, জানে কিনা সেটায় প্রাধান্য দেয়া শুরু হয়েছে।

এখন আসি অনলাইন কোর্সে,
কাহিনী একই।  আপনি জেনে সার্টিফিকেট পাচ্ছেন নাকি না জেনে  দুই নাম্বারি করে পাচ্ছেন সেটার উপর সব নির্ভর করছে। কিছু কিছু প্ল্যাটফর্মে কোর্স না করেও সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। শুধুমাত্র ভিডিও গুলা টেনে টেনে দেখবেন, আর মার্ক এজ রিড দিলেই হয়, সার্টিফিকেট পেয়ে যাবেন। বেশিরভাগ প্ল্যাটফর্মেই এমন। যেমন Udemy আছে।
কিছু প্ল্যাটফর্মে প্রতারণা করা টাফ৷ কিন্তু এই প্রতারণায় সহায়তা করার জন্যে অনেকেই কোর্স গুলো করে এন্সার আপলোড করে দেয় নেটে। আপনার তিন মাসের কোর্স করতে লাগবে ২ ঘন্টা!

এখন আসুন  বাস্তবতায়,
অনলাইন থেকে শিখা যায়না এটা চূড়ান্ত মিথ্যা কথা। তবে আপনার ইন্টেনশন যদি থাকে শুধু সার্টিফিকেটের,
আপনি জীবনেও শিখতে পারবেন না। আপনি এদিক ওদিক করে দিনে একটা করে সার্টিফিকেট পাবেন, সেটা ফেইসবুকে বা সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে আপলোড দিবেন, শ’খানেক লাইক, পঞ্চাশ খানেক কংগ্রাচুলেশনস পাবেন, একটু ভাবসাব নিবেন, সিভিতেও লাগাবেন, ভাইভা তে গিয়ে প্রশ্ন করলে হা করে তাকায়া থাকবেন, তাও জব পেয়ে গেলে পরে বসের ঝারি খেতে খেতে বলবেন, এই কোম্পানি খারাপ! এমপ্লয়ি ফ্রেন্ডলি না!
আস্তে আস্তে হবে কি, এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সে কোম্পানি আর ডিস্টেন্স লার্নিং কে ভ্যালু দিবেনা, এভাবে সব কোম্পানি দিবে না, এভাবেই দেশে ডিস্টেন্স লার্নিং কেউ পাত্তা দিবেনা।
এভাবেই আপনারা ডিস্টেন্স লার্নিংয়ের একটা সম্ভাবনা নষ্ট করে দিবেন, শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় সার্টিফিকেট দিয়ে কিছু না বুঝা বোকা মানুষের লাইক আর এপ্রিসিয়েশনের লোভে! মাঝে পরে সমস্যায় পরবে  যারা প্রকৃত ভাবেই একে গুরুত্বের সাথে লার্নিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নিছে তারা! 
এইসব ফেইসবুক বা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন নিয়ে আসছে। এখন ৫০% ছেলেপেলে কোর্স করছে নিজের শিখার তাগিদে না, বরং না করলে মানসম্মান যাচ্ছে এটা ভেবে! কিছু কিছু আবার কোর্স পছন্দ করছে  নিজের কিসে কেরিয়ার ইচ্ছা বা কিসে ইন্টারেস্ট এটা দেখেনা, মানুষ যেটার সার্টিফিকেট আপলোড দিচ্ছে সেটা দেখে!
যেমন অনেকেই স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্যে অফার করা কোভিড-১৯ এর কোর্স করে সার্টিফিকেট আপলোড করে বসে আছে! সে করার আগে চেক ও করেনি এটার জন্যে উপযুক্ত কারা, আর যারা কমেন্ট করছে তাদের বেশিরভাগ শুধুমাত্র সার্টিফিকেট দেখেই কংগ্রাচুলেশনস লিখে দেয়! এখন অবশ্য ক্যাপশনে এচিভমেন্ট লিখলে কমেন্টে অটো কংগ্রাচুলেশনস চলে আসে, জাস্ট টাচ করলেই হয়, টাইপ করা লাগেনা!
আমরা কত বোকা প্রাণি! যে কোর্স অফার করে সে নিশ্চিই খুশি হয়। এই টেরিটরির একজনকে সার্টিফিকেট দিলেই আরো ১০/১৫ নিশ্চিত সেই কোর্স করতে আসবে, জানুক বা না জানুন! মাঝেমধ্যে মনে হয়, ওরা কয়েকজনকে লটারির মাধ্যমেই সার্টিফিকেট দিবে, তাইলে আর পেইড প্রোমোশন করা লাগবেনা!
দেখুন,  কোটি কোটি কোর্স করা লাগবেনা, কিংবা ভাল্লাগলে করেন সমস্যা নাই, কিন্তু আগে নিজেকে বুঝেন, আপনার কি ভাল লাগে, কি ডেভলাপ করা লাগবে, কিসে জব করতে চান, কিসে কেরিয়ার গড়বেন,কিসে সুখ পান ইত্যাদি। মন দিয়ে কোর্স করুন, টাইম নিন, শিখে শিখে করুন! বন্ধু বা ভাই থেকে উপদেশ নিতে পারেন কিন্তু চোখ বুঝে সে যা করে তাই করা লাগবে এমন না।
আপনাদের সামনে একটা বড় সুযোগ আছে শিখার, জ্ঞান অর্জন করুন, প্রতারণা করার দক্ষতা বাড়াবেন না দয়া করে।  এতে দীর্ঘ মেয়াদে আপনারো ক্ষতি, আবার যারা ভাল করে পড়ছেন তাদেরো ক্ষতি।

সুযোগ কাজে লাগান,
ডিস্টেন্স লার্নিংয়ে অভ্যাস করুন,
নিজের প্রতি সৎ থাকুন,
সাফল্য আপনার আসবেই।

No comments