Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Pages

Recent Writings

{latest}

ভাঙা চশমায় খণ্ড খণ্ড আকাশ ( পর্ব: ০২)

  - হ্যাঁ  অনেকদিন পর আবার! কী যেন বলছিলাম? অহ হ্যাঁ! লাগামছাড়া জীবনের ফ্যান্টাসি!  আমার ঘরের চালের ফুটো দিয়ে আকাশ দেখা যায়, কয়েকছটাক জ্যোৎস...

 


- হ্যাঁ  অনেকদিন পর আবার! কী যেন বলছিলাম? অহ হ্যাঁ! লাগামছাড়া জীবনের ফ্যান্টাসি! 

আমার ঘরের চালের ফুটো দিয়ে আকাশ দেখা যায়, কয়েকছটাক জ্যোৎস্না ছাড়া চা-টাও দিতে পারছি না তোমাকে!

 

খাবে না? বেশ! 

 

কি বলছিলাম? লাগাম ছাড়া জীবনের ফ্যান্টাসি? 

হ্যাঁ এক সময় ছিল বটে! কী সব আকাশকুসুম চিন্তা করে নিজে নিজেই দু:খ পেয়ে সেই বিরহবিলাসের অহরহ মেলা বসতো মাথার মধ্যে! তবে তারপর সব পালটে গেল, কোথা থেকে কী হয়ে গেল!

এখন মাঝেমধ্যেই ঘোর লেগে যায়, এই সে কখনো মনে হয় তুমি জলজ্যান্ত মানুষ, আবার কখনো মনে হয় মনের ডিল্যুশনে তুমি ব্রেনের সেলে জন্ম নেওয়া কেউ, আর এটা স্রেফ ড্রামাটিক মনোলগ। 

 

সে যা-ই হোক,  প্রতিদিনই তো অতন্দ্রিলার গল্প বলেই দিন পাড় হয়, এই কয়েক দিনে না হয় তুমিই শুনলে!

হঠাৎ করেই একজনকে দেখার পর মনে হল বসন্ত বারমাসি ! দিন ভর্তি জ্যোৎস্না, তীব্র আগুনজ্বলা রোদকেও শীতের কুসুম গরম পানির মত স্বস্তিদায়ক লাগা শুরু হলো! এক তীব্র ভাল লাগার পরম জড়তা যেন আমাকে গ্রাস করে নিল!

তখন মনে হল, আমি এক অন্য মানুষ। সচরাচর আমি যুক্তিবাদী মানুষ, কিঞ্চিৎ খোলা মনের মানুষ হিসেবেই জানি নিজেকে। তারপর তার সাথে পরিচয়!  

এরপর কেমন অন্য রকম আমার দেখা! এরপর সবসময়, মনে হল এ আমার ব্যক্তিগত দেবী! কেউ পুজো দিবে না, কেউ যখনতখন চেয়ে বসবে না! এক অদ্ভুত স্বার্থপরতা টের পাই!


না, না! ছন্নছাড়া জীবনের মোহ, বাউন্ডুলে জীবনের লোভে দেবী বিসর্জন দিয়ে এই তীব্র একাকীত্বে আলিঙ্গন নয়। এসব বাউন্ডুলে চিন্তাভাবনা তাকে দেখার পরেই বিদায় নিয়েছে নিজের অজান্তেই। টের পাইনি! তারে দেখার পরে তাকে ছাড়া অন্যকিছুর অস্তিত্ব ছিল না বা এখনো নেই।

বার বার 'সে', 'তাকে' বলাটা কেমন যেন! তারচেয়ে বরং তার একটা নাম দিই! কী নাম দেব? 'চন্দ্রাবতী'? 'অতন্দ্রিলা'? 'সোনালি'? আচ্ছা অতন্দ্রিলা বলেই ডাকি।


মাঝেমধ্যে এমন হয়, কারো সাথে থাকা যায় না, আবার দূরে সরাও যায় না! একই মানুষের কাছে কত রাগ, অভিমান, তৃষ্ণা, বিতৃষ্ণা, ভালবাসা, দু:খ, সুখ, যন্ত্রণা, হাসি! আমি মাঝেমাঝে অবাক হই! একই মানুষের একই স্পর্শে এত শত ছোঁয়া!

হ্যাঁ যা বলছিলাম। অতন্দ্রিলার সাথে থাকা নাকি চলে আসা কোনটা বেশি কষ্টকর এটা নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন। তবে জানি, আমাদের এই গল্প কেউ শুনবে না, কেউ মনে রাখবে না!

 সবার জীবনেই এমন কত শত গল্প থাকে! যে যত সুন্দর করে দু:খ বিলাস করতে পারে মানুষ সেটা মনে রাখে, আমি পারি না। 

আগে পারতাম, এখন পারি না।

আগে আকাশ দেখতাম, জ্যোৎস্না দেখতাম! অতন্দ্রিলাকে দেখার পর আর কিছু দেখা হয় না, এখনো চোখ মেললেই তাকে দেখি, চোখ বুঝলেও! 

যখন তাকে ছেড়ে আসছিলাম, ভেবেছিলাম শুধু তাকে ছেড়ে এসেছি, এসে দেখি আমাকেই ছেড়ে এসেছি। শোক, দু:খ, শব্দ সবই রেখে এসেছি। 


হ্যাঁ মাঝেমধ্যে মনে হত, পাশে থাকাটাই সব! আবার মনে হত, পাশে থাকাটাই সব না! এই দোটানায় এখনো যে ভুগী না এমন না! মাঝেমধ্যে মনে হয়, চাইলেই তো থেকে যাওয়া যেত! মোড়ের নাছোড়বান্দা রহমত ভিক্ষুকের মত, ভালবাসা প্রার্থনা করে পথরোধ করা যেত! কিংবা ভালবাসার তীব্র তীরে এফোঁড়ওফোঁড় করে নিজের কাছে রেখে দেওয়া যেত।

 

কিন্তু দেবী কি ব্যক্তিগত হয়? 

অতন্দ্রিলাকে দেখার পর হঠাৎ খেয়াল হল, আমি মহানুভব গণতন্ত্রে রাজি না, বরং আমি ভয়ানক স্বৈরশাসক ! তার হাসি, সুখ , উচ্ছ্বাস, দু:খ, কান্না সব আমার! এ শহরের পুরো অলিগলি রাজপথে পোস্টার সাঁটিয়ে দেব,"ব্যক্তিগত সম্পত্তি, প্রবেশ নিষেধ '! 

 কিন্তু দেবী কী ব্যক্তিগত হয়! ভক্তরা কি হতাশ হয়, দেবী কী নিরাশ করে! 


সেই থেকেই আমার এই অচেনা স্বার্থপর, স্বৈরাচারী আমি'র সাথেই আমার বাস। 

এখনো অবশ্য তার সাথেই বাস। চোখ বুঝলে তাকে দেখি, চোখ খুললেও তার ছবি ভাসে চোখ। ঘুমালো নিত্যনতুন স্বপ্ন বুনি, জেগে থাকলে তাকে নিয়েই গল্প বলি! এখনো তার সাথেই আমার বাস।

এখনো এই পোড়া শহরে তার সাথে বেড়ে উঠছি,

আমরা তো একসাথেই বুড়ো হব, হয়ত দূরে দূরে, তবুও এক সাথেই তো!

No comments