[কিছু ব্যাপারে ক্রিটিক্যালি আর বোল্ডলি লেখা হতে পারে, কেউ মন খারাপ করলে আমার কিছু করার নাই। লেখা স্কিপ করে যেতে পারেন। নইলে আমাকে। লেখা আ...
[কিছু ব্যাপারে ক্রিটিক্যালি আর বোল্ডলি লেখা হতে পারে, কেউ মন খারাপ করলে আমার কিছু করার নাই। লেখা স্কিপ করে যেতে পারেন। নইলে আমাকে। লেখা আপনার গায়ে লাগলে বুঝবেন আপনার সমস্যা আছে। আমাকে অপছন্দ করার পাশাপাশি নিজেকে সংশোধন করতে পারেন।
লেখা অগুছালো হতে পারে, বানান ভুল হতে পারে। অসুস্থ, এন্টিবায়োটিক খেয়ে লিখতে বসলাম।]
করোনা সংকট দেশ আক্রন্ত হওয়ার আগেই চীন এবং ইউরোপ এবং আমেরিকায় ওয়েভ শুরু হয়। তখনি ভ্যাক্সিন আবিষ্কার নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়।
আমাদের মেজরিটি ভ্যাক্সিন সম্পর্কে জানে। কিন্তু এটা আবিষ্কারের সময় ও শ্রম নিয়ে তখনো ধারণা ছিল না। স্বভাবতই অনেকেই ভেবেছে দুই তিন মাসেই করোনা বিদায় নিবে।
উন্নত আর্থিক ও সামাজিক বিপর্যয় দেখে মোটামুটি ধারণা হয়েছে সবার। প্রথম দিকে সবাই মোটামুটি চেয়েছে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। এটা গুরুত্বপূর্ণ একটা পদক্ষেপ ছিল। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে যতটুকু সম্ভব সাহায্য করা শুরু করে।
কে কত মানুষকে সাহায্য করেছে এটাই সব না জানি, কারণ নিজের যা আছে সেটা দিয়ে একজনকে সাহায্য করাও কম সম্মানের না। তবুও এই কাজটা গুছিয়ে দায়িত্ব নিয়ে করে বিদ্যানন্দ। অসাধারণ ভাবে তারা অর্থ কালেকশন ও সেটার বস্তু ও সেবামূলক ট্রান্সফর্মেশন করে ফেলতে সক্ষম হয়। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে বা সাংগঠনিক ভাবে তাদের সাথে যুক্ত হয়। এটা আমার দেখা সবচেয়ে অসাধারণ একটা কার্যক্রম। এবং লিডারশীপ।
যাইহোক,
তখন অনেক তরুণরা গুচ্ছ আকারে সংগঠিত হওয়ার ও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। এই ইস্যু আজকের ফোকাস পয়েন্ট।
আমরা সে সময়ে প্রচুর দলগত কাজ দেখতে পাই। সেগুলাকে সংগঠন নামে ডাকছি না। কারণ সাংগঠনিক কাঠামো বা অন্যান্য উপাদান নেই। যাইহোক, তারা অসাধারণ পরিশ্রম করে বস্তুগত ও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছল। দিনে দিনে এত এত দল বাড়ে যে ডোনেশনের টাকা ভাগ হয়ে যাচ্ছিল। অর্থাৎ আগে হয়ত এক দল ১০০০০ টাকা কালেকশন করতে পারতো। এখন ১০০০০ টাকা ২০ টা দলের কাছে যাচ্ছে, প্রতিদল ৫০০ করে কালেক্ট করতে পারছে।
করোনা যেহেতু সংক্রামক রোগ, এটাকে সাইক্লোন, নদী ভাঙা বা বন্যার মত অতীত অভিজ্ঞতা দিয়ে পুরোপুরি মোকাবিলা করা যাবে না। নতুন গড়া দল গুলো বেশির ভাগই বয়সে তরুণ হওয়ায় এই ব্যাপারটা অনুধাবন করতে সমস্যা হচ্ছিল। এছাড়া অর্থের পরিমাণ কম হওয়ায় তারা পরিকল্পনামত আগাতেও পারছিল না। এবং তাদের শ্রমে প্রত্যাশিত ফলাফল আসেনি।
কিন্তু ২০ টা দল মিলে একটা দল হলে আরো ভাল ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, তারা একত্রিত হয় নি কেন?
এটার ব্যাখ্যা জটিল।
আরেকটু পেছন থেকে শুরু করতে হবে।
আমার যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের সাথে মেলামেশা অভিজ্ঞতা বেশি, সে আলোকেই চিত্রায়ণ করা।
বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ( অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই) সংগঠন করার একটা কালচার সৃষ্টি হয়েছে। এটা খারাপ না। এক্সট্রাকারিকুলারে জড়িত হলে অনেক স্কিল ডেভলাপ হয়। কিন্তু আদর্শ সিস্টেম আর বাস্তবতায় কিঞ্চিৎ পার্থক্য আছে। আবার ভার্সিটির সংগঠন আর সামাজিক সংগঠনেও পার্থক্য আছে।
সে পার্থক্যে পরে আসবো। আগে দেখি আমরা কেন ভার্সিটির সংগঠনে ছাত্রছাত্রীদের যুক্ত হওয়া উচিত।
প্রথমত, এখানে প্রচুর জ্ঞানার্জনের সুযোগ আছে। নিজের জড়তা কমানো, কথা বলা ও নেগোসিয়েশন স্কিল বাড়ানো, কাজের দক্ষতা বাড়ানো, ক্রিটিকাল সিচুয়েশন ফেইস করা, ডিস্টার্বেন্স হ্যান্ডেল করার দক্ষতা অর্জন, নেতৃত্ব দেওয়া সহ নানান ভাবে নিজেকে ডেভলাপ করার সুযোগ আছে এবং মূলত এই জন্যেই সংগঠন করা উচিত।
যদিও বর্তমানে এই অবস্থার আশংকাজনক পরিবর্তন হয়েছে। এখন মূলত ছেলেপেলে নিজেকে ডেভলাপমেন্ট এর চেয়ে নিজের প্রচারে বেশি মনোযোগী। যে সব সংগঠন বেশি প্রচারে বিশ্বাসী ছেলেমেয়ে সেসব সংগঠনমুখী। তারা সংগঠনে কাজ করতে চায় না, কিন্তু পজিশন চায়। এখন পজিশন নির্ভর সংগঠনের চাহিদা বেড়েছে। আরেকটা বড় সমস্যা হচ্ছে যারা সংগঠনমুখী তারা পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে, অথচ দুটা একসাথেই চলার কথা ছিল।
সেল্ফ ব্রান্ডিং বা প্রোমোশন নিয়ে ছেলেমেয়েরা বেশি জানেনা। বা আমি হলফ করে বলতে পারি তারা ব্রান্ডিং কি এটা বই দূরে থাক, গুগল করেও দেখেনি। সস্তা মোটিভেশন স্পিকার আছে কিছু, তারাই শব্দ দুটার বিশ্রী আর বিকৃত প্রচার চালায়। তাদের খপ্পরে পরে ছেলেপেলেরা ভাবছে নিজের নাম সবাই জানাই হচ্ছে প্রচার! নিজের চেহারা চিনলেই প্রচার। আর তেমন কোন আইডিয়া নেই এটা নিয়ে।
যা-ই হোক, এই প্রচার প্রিয় মানুষ গুলো দুইভাবে সংগঠন সিলেকশন করে। প্রথম মত, কোন সংগঠনে প্রচার বড়, অন্যটা হল কোন সংগঠনে তাড়াতাড়ি কিংবা নিশ্চিত পোস্ট বা পজিশন পাওয়া যাবে। এই দুটা ব্যালেন্স করে তারা সংগঠনে যোগ দেয়। এরপর লেগে থাকে পোস্ট নিশ্চিত করতে। মাঝে স্কিল ডেভলাপমেন্ট আর লিডারশীপ কোথায় হারিয়ে যায় খুঁজে পাওয়া যায় না। বড় বড় ক্লাবের প্রেসিডেন্ট, জিএসদের দেখা যায় ঠিকঠাক একটা প্রোগ্রাম ডিজাইন করতে পারে না, ডিস্টার্বেন্স হ্যান্ডেল করতে পারে না, কমফোর্টজোনের বাইরে কাজ করতে পারে না, দু চারজন দ্বিমত পোষণ করলে আর টিম ওয়ার্ক করতে পারে না!
এ সংকট শুধু ক্লাবের না, এটা একটা জাতীয় সংকটে রূপ নিয়েছে।
যাইহোক,
এই মানুষ গুলো যখন পোস্ট এর জন্যে মরিয়া হয়ে উঠে, তখন তাদের মত মানুষদের সাহায্য নেয়। এতে করে একটা চেইন ক্রিয়েক্ট হয়ে। তাদের সামনে পেছনে পাশে সব এই মানসিকতা মানুষ থাকে। তারা বিশ্বাস করতে শুরু করে, এটাই বোধহয় দুনিয়া!
ভার্সিটির ক্লাব গুলোর বড় কিছু দুর্বলতা হচ্ছে বয়স ভিত্তিক পোস্ট দেওয়া, সময়কালের নিশ্চয়তা, কখনো কখনো কিছু কিছু শিক্ষকদের অকাম্য হস্তক্ষেপ ( পছন্দের মানুষকে নেতৃত্বে আনা বা নিজের ব্যক্তিগত ফিলোসোফি বাস্তবায়ন, এতে ছেলেমেয়েরা নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন করতে পারে না।) ইত্যাদি।
যাইহোক,
এখন সবার পোস্ট প্রয়োজন, কিন্তু ক্লাব তো কম!
এরপর শুরু হয় ভাঙন! নতুন ক্লাব সৃষ্টি, নতুন সংগঠন সৃষ্টি ইত্যাদি। এখানে নতুন সৃষ্টির উদ্দেশ্য পোস্ট, তাই এই নতুনে সমস্যা। নতুনের লক্ষ্য আদর্শিক বা কার্যক্রমের পার্থক্য হলে সমস্যা ছিল না।
যাইহোক,
ভার্সিটির এই ধারাটা কোন না কোন ভাবে বাইরে চলে এসেছে। এটা পুশেও আসতে পারে কিংবা আসতে পারে প্রয়োজনে। কারণ তরুণদের সংখ্যা বাড়ছে। তারা পড়াশোনায় খুব একটা টাইম দেয় না, আর্থিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয় না।
কিন্তু ব্যক্তিগত প্রচারের জন্যে দল গঠন করে। সেটা ফেইসবুক গ্রুপের মাধ্যমে মজা নেওয়া, বা সংগঠন বা ইত্যাদি
এবার পেছনে ফিরে আসি,
মূলত ব্যক্তিগত প্রসারের জন্যে প্রচুর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল সৃষ্টি হচ্ছে। তারা একত্রিত হচ্ছে না। অথচ খুব সহজেই একই এলাকায় একই কাজ করা মানুষ গুলো এক হতে পারতো। তারা এক হচ্ছে না, তারা একসাথে কাজও করছে না।
সমস্যা শুধুমাত্র আলাদাভাবে কাজ করার না, সমস্যা হচ্ছে প্রধান উদ্দেশ্যের, সমাজের প্রধান সমস্যা সম্পর্কে ধারণা না রাখা, সমাজ সম্পর্কে ধারণা না রাখা ইত্যাদির।
করোনা ২/৩ মাসে বিদায় নিলে এই দল গুলোর অধিকাংশ টিকে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু করোনা দীর্ঘায়িত হওয়ায় সে সম্ভাবনা কমছে।
এই দল গুলো অবশ্যই বাহবা পাওয়ার যোগ্য, কারণ যতটুকু করেছে সেটাও কম না। কিন্তু তারা যতটুকুর করেছে সেটা একত্রিত হয়ে করলে আরো বড় ইমপ্যাক্ট রাখা যেত না টা একটা আফসোসের জায়গা।
সমাপ্ত।
[ শারীরিকভাবে অসুস্থ ফিল করছি। পরের পর্বে আবার দেখা হবে]
//রাত ১টা ৫৬ মিনিট, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০//
No comments