Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Pages

Recent Writings

{latest}

রুশ - ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক জ্বলানি সঙ্কটের প্যারাডক্স - রাফিউ আহমেদ

  রুশ -  ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক জ্বলানি সঙ্কটের প্যারাডক্স   রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ।  এটাকে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ না বলে বাস্তবিকভাবেই  'ই...


 

রুশ -  ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক জ্বলানি সঙ্কটের প্যারাডক্স

 

রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ। 

এটাকে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ না বলে বাস্তবিকভাবেই  'ইউক্রেনে রাশিয়া - ইউক্রেন ও অন্যান্যদের যুদ্ধ' বলা উচিত।  ইউক্রেনকে ইউএসএ, ন্যাটো সহ অনেক মিত্র দেশ ও সংগঠন অস্ত্র সম্পর্কিত নানান সহায়তা দিচ্ছে আবার রাশিয়াও নানান ভাবে সাহায্য পাচ্ছে।   

 


যুদ্ধের যৌক্তিকতা কি, কেন হচ্ছে এসব নিয়ে মোটামুটি অনেকেই অনেক থিউরি দিচ্ছে, তার মধ্যে আছে আমাদের পত্রিকাগুলোর পশ্চিমা মিডিয়ার ট্রান্সলেটেড নিউজ!    

 

আজ যুদ্ধের প্রেক্ষাপট বাদ দিয়ে একটু অন্যদিকে দিয়ে যুদ্ধটাকে দেখার চেষ্টা করি, প্রসঙ্গে জ্বালানি সঙ্কট।   

এখন বিশ্বে যে ‘জ্বালানি সংকট’ রয়েছে এটা কি আসলেই প্রচলিত অর্থে ‘জ্বালানি সংকট’?  সংকটের যে ব্যাখ্যা মানুষ বুঝে বা পত্রিকা গুলো যা লেখালেখি করে তার মূলকথা দাঁড়ায় 'জ্বালানী কম/নেই'।   

তা হলে বিশ্বে কি জ্বালানি নেই?  অবশ্যই আছে। রাশিয়ার কাছে, OPEC, ভেনিজুয়েলা সহ অনেক দেশের কাছেই পর্যন্ত জ্বালানি আছে।  তাহলে জ্বালানি নেই কেন বলা হচ্ছে? মূলত জ্বালানি ইউএসএ বা তার এমন মিত্রদের হাতে হাতে নেই যাদের কাছে থাকলে ইউএসএ বা তার সমর্থনপুষ্টদের লাভ হত।   

 

যেহেতু জ্বালানি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, সেহেতু তারা প্রথমে অর্থনৈতিক সহ নানান নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখিয়ে কম ক্ষমতাসীন দেশগুলোকে ইউএসএ তার শত্রুদের থেকে জ্বালানি কিনতে দিচ্ছে না। অবশ্য ইউএসএ চেয়েছিল ভেনিজুয়েলা, ইরান, সৌদির উৎপাদন বাড়াতে যদিও তাদের ফোন কল বা সৌদি ভ্রমণে আরো জ্বালানি অপচয় বাদে ভাল কিছু হয় নাই।  তাইলে মোটামুটি এটা বুঝা যাচ্ছে যে জ্বালানির সঙ্কট না, সঙ্কটে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এখন এটাকে আমরা কিভাবে বিশ্লেষণ করবো তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। যেমন কোন দেশ কি দুটা দেশের মধ্যর সংঘাতকে তাদের অভ্যন্তরীণ ভাববে নাকি সার্বিকভাবে বৈশ্বিক যেকোন ঘটনাই নিজেদের ভাববে। সাধারণত বিশ্ব রাজনীতির মোড়লরা যেভাবে বৈশ্বিক ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দেখায়, তুলনামূলক ছোট দেশগুলো সেভাবে দেখায় না। তবে ছোট ও মাঝারি দেশগুলোর উপর একটা স্পটলাইট সবসময় থাকে, কারণ তাদের জনসংখ্যা অধিকাংশে বেশি, অর্থাৎ বাজার অনেক বড়। যা বড় দেশগুলোর আভিজাত্যের কিংবা যুদ্ধের রসদের যোগান দিয়ে থাকে।     

 

এবার আমরা একটা সহজ সমীকরণ মিলাই,  কোন দেশ নিজে তীব্র অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে থাকার পরেও কি কম টাকার জ্বালানি স্বেচ্ছায় ফিরিয়ে দিত? কোন সম্ভাবনাই নেই। ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বড় বড় নেতারাই এখনো রাশিয়া থেকে তেল কিনে যাচ্ছে। এমনকি ভারত, নেদারল্যান্ড, তুরস্ক কম মূল্যে রাশিয়া থেকে জ্বালানি কিনছে, সমস্যা বাঁধে মধ্যবিত্ত ও গরীব দেশগুলোর বেলায়। তারা ভারত তুরস্কের মত ইউএসএ এর চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করতে পারে না।   

প্রথম দিকে ইউএসএ অর্থনৈতিক ঝুঁকিকে কষ্টকর হলেও মেনে নিতে নৈতিকতার ধারণা চাপিয়র দেওয়ার পরিকল্পনা করে।  পশ্চিমা মিডিয়া রাশিয়ার হামলাকে অবৈধ, হস্তক্ষেপ, নিরীহ মানুষের উপর আগ্রাসন সহ নানান রঙ দিতে চেষ্টা করলেও দশের পর দশকে তাদের প্রায় একই রকম অসংখ্য নগ্ন হস্তক্ষেপ, যুদ্ধে এসবের ফলে তারা মোরাল গ্রাউন্ড হারিয়ে ফেলেছে। রাশিয়া যা করছে একই রকম কাজ বা তারো বেশি আমেরিকা ও তাদের মিত্ররা দশকের পর দশক করে আসছে, ভুতের মুখে রাম রাম এখন মানুষ খাচ্ছে না।  তাই স্বভাবতই মানুষ এখন এই স্ট্রাটেজিতে ইনফ্লুয়েন্সড হবে না।  ব্যাপারটা আরো বেশি প্রকাশ পায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেনের  সৌদি ভ্রমনের পর। সৌদি যুবরাজ নিজের কাজের দায় পেতে খসেগী বনাম আল-জাজিরার সাংবাদিক হত্যা, ইরাক যুদ্ধ বনাম ইয়েমেনের যুদ্ধ সহ নানান ইতিহাস তুলে ধরেন, যা বিশ্ব মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয়।    

যাইহোক,  নৈতিকভাবে কোন দেশ রাশিয়ার হামলার প্রতিবাদে জ্বালানি কিনবে কিনা সেটার সিদ্ধান্ত তার নেওয়া উচিত, কোন দেশ প্রচারণা চালাতে পারে কিন্তু ভয় দেখাতে পারে না। কিন্তু এখন প্রায় সব দেশই অর্থনৈতিক অবরোধের ভয়ে কম মূল্যের জ্বালানি কিনতে পারছে না।   

 

ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে ইউএসএ যে জ্বালানি সংকট সৃষ্টি করছে তার প্রভাবগুলোর দিকে একটু নজর দেইঃ প্রায় সব দেশেই মুদ্রাস্ফীতি অনেক বেড়েছে, অনেক দেশের ক্ষমতাসীন সরকারের পতন হয়েছে, বিশ্ব ব্যাপী দারিদ্র্য বেড়েছে, বিশ্ব অর্থনীতি Depression এর দিকে এগুচ্ছে ও অন্যান্য। করোনার পরপরই এমন সংকটের জন্যে কেউ প্রস্তুত ছিল না। যা অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর কারণ হবে।   

 

আমাদের এটা খেয়াল রাখতে হবে যে, জ্বালানি কোন একক পণ্য না, বরং এটা এমন একটা পণ্য যা সকল পণ্যের একদম মূলে কাজ করে। পণ্য উৎপাদন, পরিবহণ সহ সবক্ষেত্রেই জ্বালানির প্রয়োজন।  বরং সভ্যতা টিকেই আছে জ্বালানির মাধ্যমে।  স্রেফ নিজের এজেন্ডা বাস্তবায়নের নামে পৃথিবীর শত শত কোটি মানুষের জীবন নিয়ে ভয়ংকর এ জুয়া খেলার অধিকার কারো নেই। এমন খেলায় শক্তিধর কোন এক দেশ হয়ত জিতবে, কিন্তু মানবতা হেরে যাবে।

 

No comments