যারা যুদ্ধ বিরোধী তারা কী আসলেই যুদ্ধ বিরোধী? ইউক্রেন - রাশিয়ার যুদ্ধের সময় অনেকেই যুদ্ধ বিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছেন, লিখালিখি করছেন। ব্য...
যারা যুদ্ধ বিরোধী তারা কী আসলেই যুদ্ধ বিরোধী?
ইউক্রেন - রাশিয়ার যুদ্ধের সময় অনেকেই যুদ্ধ বিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছেন, লিখালিখি করছেন। ব্যাপারটা অবশ্যই জরুরী, যুদ্ধ মুক্ত পৃথিবী হোক।
কিন্তু যারা যুদ্ধ বিরোধী তারা কী আসলেই যুদ্ধ বিরোধী?
যুদ্ধ বিরোধী বলতে আসলে কী বুঝায়?
যুদ্ধ একটা ঘটনা মাত্র, এ ঘটনা ঘটার জন্যে কিছু জড়িত। যেমন সামরিক বাহিনীতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়া, নতুন নতুন সমরাস্ত্র বানানো, অস্ত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি, যুদ্ধ প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা, পারমাণবিক অস্ত্র বানানো ও সংখ্যা বৃদ্ধি, সামরিক জোট গঠন ও প্রসার, সামরিক মহড়া, যুদ্ধের জন্যে উত্তেজিত করা, হুমকি দেওয়া, ব্যবসার টাকা যুদ্ধ বা অস্ত্র বানাতে ব্যয় করা ইত্যাদি।
একজন ব্যক্তি যিনি যুদ্ধ বিরোধী হলে তিনি এসব ব্যাপারে সংবেদনশীল হবেন, শুধু যুদ্ধ শুরু হলেই প্রতিক্রিয়া দেখাবে এমন না। বরং সে যুদ্ধ সৃষ্টির সকল উপকরণ নিয়ে সচেতন থাকবেন এবং প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করবেন কিংবা জনমত গঠন করবেন।
কিন্তু বর্তমানে কী হচ্ছে?
বর্তমানে কয়েক ধরণের যুদ্ধ বিরোধী মানুষ দেখা যায়। যেমন - প্রকৃত যুদ্ধ বিরোধী, সাময়িক যুদ্ধ বিরোধী - যারা যুদ্ধ লাগলে একটু কথাবার্তা বলে চুপ হয়ে যান, সুবিধাবাদী - যারা মানুষের পালস বুঝে কিংবা নিজের লাভের জন্যে যুদ্ধের বিরোধিতা করে থাকে।
এখন প্রকৃত যুদ্ধ বিরোধীর সংখ্যা কমছে। বাড়ছে অন্যদের সংখ্যা।
UN চার্টারের ২ নাম্বার আর্টিকেল মতে কোন দেশ অন্য দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত হানতে পারবে না। কিন্তু ৭৪ নাম্বার ধারায় আছে কোন দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্যে সে দেশে মানবিক হস্তক্ষেপ করা যাবে।
এমন অবস্থায় বিশ্বের কয়েকটা দেশ অন্য দেশে মানবিক হস্তক্ষেপের কথা বলে যুদ্ধবিগ্রহ করেই যাচ্ছে। আর তাদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া এসব যুদ্ধকে যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
যেমন অনেক বছর ধরেই ইসরায়েল গাজায় হামলা চালাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া ইসরায়েলের পক্ষে প্রচারণা চালায়।
তাদের প্রচারণার কারণেই হোক, কিংবা বড় পক্ষের সাথে থাকার জন্যেই হোক; আমাদের আশেপাশের কিছু 'যুদ্ধ বিরোধী' মানুষ চুপ থাকছে।
আবার যখন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধ হলে কিংবা পদক্ষেপ হলেই তারা যুদ্ধ বিরোধী স্লোগান তুলছে।
তারা মূলত যুদ্ধ বিরোধী না, তারা সুবিধাবাদী কিংবা কারো এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যে যুদ্ধ বিরোধী হচ্ছে।
যেমন, ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধে, পশ্চিমারা রাশিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে সেটা পরবর্তীতে ইউক্রেনের অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় করার ঘোষণা দিয়েছে। ভাল কথা।
কিন্তু বছরের পর বছর যে গাজা প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে, সেটার অবকাঠামোর কি হবে? কিংবা সিরিয়া? বা ইরাক? লিবিয়া?
বিশ্বে যুদ্ধ বা হামলা হলেই আমেরিকা কিংবা তাদের জোটরা শত শত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেয়, ইসরায়েলকে কেন দেয় না?
এসব পাবলিক ফুটেজের জন্যে, কিংবা লাভের জন্যে যারা ''Selective' যুদ্ধ বিরোধী হচ্ছেন, তারাও মূলত যুদ্ধের জন্যে সমান অপরাধী।
নানান দেশ প্রতিনিয়ত অত্যাধুনিক অস্ত্র বানাচ্ছে, পরীক্ষা করছে, এসব বন্ধ হওয়া দরকার।
দরকার যুদ্ধ বন্ধ হওয়া। এইজন্য দরকার বিশ্বব্যাপী জনমত গঠন। এক্ষেত্রে অবশ্যই যারা নিজের লাভের জন্যে যুদ্ধ বিরোধী, তাদের দূরে রাখতে হবে । জাতীয়তাবাদের দোহাই দিয়ে অন্য দেশে হামলা করা যুক্তিসঙ্গত নয়। এখন যুদ্ধ কোন নির্দিষ্ট সীমানায় থাকে না, বরং এখন যুদ্ধ নানান ভাবে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। তাই পৃথিবীর সবার জন্যে যুদ্ধ ক্ষতিকর।
No comments