মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস নিয়ে কিছু ভিডিও, টক শো আর পত্রিকার নিউজ ও বিশিষ্ট মানুষের বিবৃতি পড়লাম। তাদের শ্রমিক দিবস, শোষণ ...
মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস নিয়ে কিছু ভিডিও, টক শো
আর পত্রিকার নিউজ ও বিশিষ্ট মানুষের বিবৃতি পড়লাম। তাদের শ্রমিক দিবস, শোষণ মুক্তির
উপায় নিয়ে তথ্য সমৃদ্ধ উর্বর লেখা ও কথা বার্তা
শুনে ভাবলা, এখানের অনেক টার্ম বা কী ওয়ার্ড আমিই বুঝতে পারছি না, পাঁচ সাত হাজার টাকা
বেতন পেয়ে বড় পরিবার সামলানো শ্রমিক কিভাবে বুঝবে!
শ্রমিক দিবসে অনেক জায়গায় কেক কাটা হত, এবার করোনার জন্যে সম্ভব
হয়নি, তো সেই কেকের উপরের লিখাটাও ভাল করে কয়জন শ্রমিক পড়তে পারতো?
নিজেদের লাভের জন্যে করোনাকালীন সময়ে লাখ লাখ কর্মীর জীবনকে হুমকির মুখে ফেলা বিজিএমইএ
ও কর্মীর সুন্দর ছবি ইডিট করে মে দিবস কে মহান ট্যাগ দিয়ে কর্মীদের সম্মান জানায় ফেইসবুকে।
অথচ তাদের কতজন কর্মী এই প্ল্যাটফর্মে এসে তাদের দেয়া সম্মান নিতে পারবে সেটা নিয়ে
সন্দেহ আছে প্রচুর।
এসবেই বাইরে আসুন অল্প করে মে দিবস সম্পর্কে জেনে নিই।
“১৮৮১ সালে নভেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আমেরিকান ফেডারেশ অব লেবার’। ১৮৮৪ সালের ৭ অক্টোবর সেখানে চতুর্থ সম্মেলনে গৃহীত হয় এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত, বলা হয় ১৮৮৬ সালের ১ মে থেকে সব শ্রমজীবী মানুষ আট ঘণ্টার বেশি কোনওভাবেই কাজ করবে না। ওই দিনটিতে তাই পাঁচ লক্ষ শ্রমিক প্রত্যক্ষভাবে ধর্মঘটে যোগ দেন। শাসকদল এই ঐক্যবদ্ধ বিশাল শ্রমিক সমাবেশ ও ধর্মঘট দেখে ভয়ে পিছিয়ে যায়।
৩ মে ম্যাককর্মিক হার্ভাস্টার কারখানায় নির্মম পুলিশি আক্রমণ চলে, তাতে প্রাণ হারান ৬ জন নিরীহ শ্রমিক। সেই ঘটনা ইতিহাসের পাতায় চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এর পরের দিন অর্থাৎ ৪মে হে মার্কেট স্কোয়্যারে আয়োজিত হয় এক বিশাল প্রতিবাদ সভা। পুলিশ এই সভায় গুলি চালালে শহিদের রক্তে রাঙা হয় হাতের পতাকা। গ্রেফতার করা হয় চারজন শ্রমিক নেতাকে। বিচারের নামে শুরু হয় প্রহসন, জারি করা হয় ফাঁসির আদেশ।
দেশকালের গণ্ডি পেরিয়ে এই নৃশংস বর্বরতার খবর পৌঁছয় দুনিয়ার সব মেহনতি শ্রমজীবি মানুষের কানে। ১৮৮৯ সালে জুলাই মাসে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রথমদিনের অধিবেশনেই সর্বসম্মত প্রস্তাব গৃহীত হয় যে ১৮৯০ সালে ১ মে থেকে প্রতি বছর শ্রমিকশ্রেণির আন্তর্জাতিক সংহতি, সৌভ্রাতৃত্ব ও সংগ্রামের দিন হিসেবে এই দিনটি পালিত হবে। এভাবেই ১৮৮৬ সালের ঐতিহাসিক মে দিবস ১৯৯০ সালে আন্তর্জাতিক মে দিবসে পরিণত হল।“ ( কালেক্টেড)
যাইহোক, কিছু বাস্তবতা বুঝতে হবে। পেপারে বিবৃতি দিয়ে, টক শো
করে কখনো শ্রমিকদের মুক্ত করা যায় নি। বরং শ্রমিকদের মূলো দেখিয়ে তারা ব্যবসা করছে।
নিজের ফেইম বাড়াচ্ছে।
তবে এ কথা সত্য, নিজেদের মুক্তি নিজেদেরই আদায় করা লাগে। কেউ
আপনার অধিকার আদায় করে দিয়ে যাবে না। এক্ষেত্রে শ্রমিকদেরও কিছু গাফিলতি আছে বলে মনে
হয়।
কয়েকদিন আগেই, পরিবহণ ধর্মঘট ডেকে পরিবহণ শ্রমিকরা এক ধরণের
অরাজকতা করে বলা যায়। সাধারণ মানুষের গায়ে ডিজেল দেয়ার ও ঘটনা দেখা যায়।
সাধারণ মানুষকে জিম্নি করে এসব করে আপনাদের কোন লাভ হয়না, বরং
শুধু কিছু মানুষের ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়ে। এসব করে কোন শ্রমিকের জীবন মান বদলেছে? বরং
শ্রমিকদের জীবন মান দিন দিন কমছে। সবার বেতনে টাইম ভ্যালু অফ মানি যুক্ত হলেও তাদের
বেতনে হয় না সচরাচর।
প্রশ্ন হচ্ছে, এত পরিশ্রম করে, সংগঠন করেও তাদের অবস্থা পরিবর্তীত
হয়না কেন? কেন দু চারদিন কাজ না পেলে তাদের খাবার সংকট হয়?
এটা অবশ্য জটিল প্রশ্ন। কিন্তু জটিল প্রশ্ন গুলোর উত্তর সহজ
থাকে।
আমরা সবাই উত্তর জানি। কেউ দেইনা। কারণ আমরা সবাই মিলেই শোষণ
করছি তাদের। তাদের বোকা বানিয়ে রাখছি। যাতে আমরাই না শুধু, আমাদের ছেলে মেয়েরা তাদের
ছেলেমেয়েদের শোষণ করতে পারে। এই মজার সমাজে, মালিকের ছেলেমেয়ে সারাজীবন মালিক, শ্রমিকের
ছেলেমেয়ে সারাজীবন শ্রমিক থাকার নিয়ম চালু হয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ম ভাঙবে কে?
সবচেয়ে বেশি প্রেরণা পাওয়া যায় ইতিহাস থেকে। ইতিহাস জানতে হবে।
সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। স্বপ্ন দেখতে হবে। তাদের শ্রমিক ব্যবসায়ীদের চিনতে হবে।
তারা প্রায়শই নিজেদেরর শ্রমীক নেতা বা বুদ্ধিজীবী ট্যাগ দেয় যারা নিজেরাই বলে তারা
শ্রমিকের মুক্তির জন্যে লড়ছে।
এত দিনে কতটুকু সফল হয়েছেন প্রশ্ন করে তাদের ডাস্টবিনে ছুঁড়ে
ফেলে নতুন ভাবে সাজাতে হবে সব।
তারাও মানুষ। সবাই একসাথে ভালো থাকতে হবে।
No comments