Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Pages

Recent Writings

{latest}

ভেটো ক্ষমতা - রাফিউ আহমেদ

১৯৪৫ সালে ক্রিমিয়ার ইয়াল্টায় রুজভেল্ট, চার্চিল, স্তালিন একটা সম্মেলনে করে। যদিও সে সম্মেলনের অনেক এজেন্ডাই ছিল, তবে বর্তমান সময় অব্দি বেশি উ...



১৯৪৫ সালে ক্রিমিয়ার ইয়াল্টায় রুজভেল্ট, চার্চিল, স্তালিন একটা সম্মেলনে করে। যদিও সে সম্মেলনের অনেক এজেন্ডাই ছিল, তবে বর্তমান সময় অব্দি বেশি উচ্চারিত হয় সম্ভবত UN এর সিদ্ধান্তে "Veto" দেয়ার ক্ষমতাই।

ভেটো ক্ষমতা আর যাই করুক, অন্তত UN টিকিয়ে রেখেছে এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে এটা জাতিসংঘকে যথেষ্ট দুর্বলও করে ফেলেছে। এই বিতর্কে পরে আসি,
আগে আসি ভেটো কি?

ভেটো শব্দটি ল্যাটিন ভাষা থেকে এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে আমি মানি না।

অনেক আগেই ভেটোর প্রচলন ছিল।
প্রাচীন রোমের কনসাল এবং ট্রাইবুনগণ আইন সভায় তাদের ভেটো প্রদান করতে পারতেন।

এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতেও সাংবিধানিক ভাবে ভেটোর প্রচলন আছে, যুক্তরাজ্যের রানীও "রাজকীয় ভেটো" প্রদানের ক্ষমতা রাখেন, যদিও প্রায় ৩০০ বছরে এর ব্যবহার হয়নি।

যাইহোক, জাতিসংঘে সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয় গুলোর দায়িত্ব বর্তায় নিরাপত্তা পরিষদের উপর। তার স্থায়ী পাঁচ সদস্যের অর্থাৎ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া এবং ফ্রান্স - এই পাঁচটি দেশ প্রত্যেকেই ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকারী। ভেটো ক্ষমতা ব্যবহারের মাধ্যমে যে-কোন একটি দেশ নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত যে-কোন ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও আইন প্রণয়ন অনুমোদনে বাধা প্রদান করতে পারে।

এমনকি গত সপ্তাহে সিরিয়া ইস্যুতে একই সপ্তাহে রাশিয়া ও চীন দুবার ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে।

এবার আসা যাক, ভেটো ক্ষমতা না থাকলে কি হত?

ভেটো ক্ষমতা না থাকলে নিরাপত্তা পরিষদের চেয়ে সাধারণ পরিষদের ক্ষমতার পার্থক্য থাকতো খুবি কম, বরং সাংখ্যিক কারণে সাধারণ পরিষদ শক্তিশালী হয়ে যেত। এবং ১৯৩ সদস্যের বেশিরভাগই বড় দেশ গুলোর দ্বারা কোননা কোন ভাবে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, তারা একত্রিত হয়ে এমন কিছু সঠিক ও প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার অধিকার পেত যা বড় দেশগুলোর জন্যে অলাভজনক। এতে স্বাভাবিকভাবেই তারা হতাশ হত এবং জাতিসংঘ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেয়ার সম্ভাবনা ছিল যার ফলাফল পুরোপুরি League of Nations এর মতই হতো।

ভেটো ক্ষমতার বন্টন যথার্থ হয়নি, পাঁচটা দেশের তিনটাই ইউরোপের। বিশ্বযুদ্ধের পর জয়ী দেশ গুলো একটা সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সব ক্ষমতা নিজেরাই রেখে দিল। যদিও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ করে UN ভেঙে আরেকটা বানানোর সুযোগ আছে এখনো, তবে সেটা কারোরই কাম্য নয়!

বরং সবাই আশা করতেই পারে UN শক্তিশালী হোক, ভেটো নিজের লাভে ব্যবহার না হোক, যদিও সেটা বর্ষায় গৃহহীনের রোদের জন্যে প্রার্থনার মতই। এমনেস্টি অনেক বারই ভেটো ক্ষমতা ত্যাগের বা বাতিলের দাবি জানিয়েছে বা জানাচ্ছে, তবে এটা অনেকটা আমাদের ফেইসবুকে বিপ্লবী স্ট্যাটাস দেয়ার মতই, শান্তি পাওয়া যায় মনে মনে, কয়েকজন লাইক শেয়ার দেয়, কিন্তু বিপ্লব আর হয়না।

আর হয়ত ৩য় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে UN এর বিলোপ না হলেও, আঞ্চলিক সংগঠনের মাধ্যমে৷ UN এর বিলোপ ঘটতে পারে। EU ভালই শক্তিশালী, আসিয়ান তাদের ইকোনমিক সাফোসিয়েন্সি নিশ্চিত করে অনেক আগেই আঞ্চলিক নিরাপত্তা বাহিনী গঠনের কাজ শুরু করেছে। ইউরোপের অলরেডি আছে। এমন সংগঠন গুলো যত শক্তিশালী হবে তত বেশি UN উইক হবে।

প্রথমে থাকে ম্যাটেরিয়ালিস্টিক কনফ্লিক্ট, এরপর শুরু হয় আইডিওলজিক্যাল কনফ্লিক্ট। কনফ্লিক্ট থাকবেই, এটা একটা দুষ্ট চক্র।
একদম চির সাম্যের চির শান্তির বিশ্ব সম্ভব কিনা সেটা ভাবার বিষয়, অন্তত এত লাখ বছরের ইতিহাস ঘাটলে এটাকে মিথ মনে হবে। যদিও নতুন কিছু যে আসবে না সেটা হলফ করে বলা যায় না।

কি হবে সেটা সময়ই বলে দিবে।





No comments