Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Pages

Recent Writings

{latest}

"Nokia: উত্থান - পতনের কারণ" - সোমেন দে।

একসময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় মোবাইল ফোন ব্রান্ড ছিল নোকিয়া। একটা দীর্ঘ সময় ধরে তারাই ছিল মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রির মার্কেট লিডার। কিন্তু ক...






একসময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় মোবাইল ফোন ব্রান্ড ছিল নোকিয়া। একটা দীর্ঘ সময় ধরে তারাই ছিল মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রির মার্কেট লিডার। কিন্তু কালের বিবর্তনে আজ তারা মার্কেট আধিপত্য হারিয়ে ফেলেছে। কি কারণ ছিল তাদের বার্থতার?

একসময়ের জনপ্রিয় মোবাইল ফোন কোম্পানি নোকিয়া কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয় ফিনল্যান্ডে  ১৮৬৫ সালে। তাদের ব্যবসা শুধু মোবাইল ফোন কেন্দ্রিক নয়। এটি একটি multinational telecommunications, information technology, and consumer electronics কোম্পানি।  ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই কোম্পানি বিশ্বের প্রায় ১০০ টির ও বেশি দেশে প্রায় ১০৩০০০ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে এবং  বিশ্বের প্রায় ১৩০ টিরও বেশি দেশে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছিল। নোকিয়া তাদের সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক স্থাপন করে ১৯৮১ সালে। এই সালেই  তারা mobira নামক এক টেলিফোন কোম্পানি কে অধিগ্রহণ করে এবং তাদের মাধ্যমেই মোবাইল ফোন এর এই অভাবনীয় যাত্রা শুরু হয়। Mobira  launch করে the Nordic Mobile Telephone (NMT) service, বিশ্বের সর্বপ্রথম international cellular network এবং তারা সর্বপ্রথম international roaming সুবিধা চালু করে। 1982 সালে Mobira launch করে Mobira Senator car phone, নকিয়ার সর্বপ্রথম মোবাইল ফোন। ১৯৮৪ সালে mobira talkman নামক ফোন  বাজারে ছাড়ে হয় যা তারা first transportable phone হিসাবে প্রচার করে। ১৯৮৭ সালে mobira cityman নামক মোবাইল ফোন launch করা হয় যার ওজন ছিল মাত্র ৮০০ গ্রাম (senator car  ছিল 10 kg & talkman ছিল 5kg)। এই mobira cityman একেবারে lightweight ফোন হওয়ায় এর বিক্রয় রাতারাতি বেড়ে যায়।  এরপর থেকেই মুলত মোবাইল ফোনের  যুগ শুরু হয়। একের পর এক নতুন নতুন মডেল এর টেলিফোন ও মোবাইল এর introduction এর মাধ্যমে উন্নীত হতে থাকে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে। ১৯৯২ সালে 1011 model  মোবাইল উৎপাদন শুরু করে, এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে তাদের ব্যাবসা  ফিনল্যান্ড থেকে বিস্তৃত হয়ে  ইউরোপ এবং এশিয়াতে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
এই সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখে তারা ১৯৯৪ সালে nokia 2100 series বাজারে নিয়ে আসে। তারা ধারনা করেছিল এই মডেরলের ৪ লাখ ফোন বিক্রি করতে সক্ষম হবে কিন্তু এই ফোনটি প্রায় ২ কোটি ইউনিট বিক্রয় হয়! তারা তাদের মার্কেট আধিপত্য ধরে রাখতে সক্ষম হয় ও ১৯৯৮-৯৯ সাল নাগাদ Motorola কে পিছনে ফেলে 25% market share নিয়ে মার্কেট লিডারে পরিণত হয়। তাদের প্রসার এতটাই বেড়ে যায় যে ২০০৩-০৫ সালের মধ্যে তারা প্রায় ৭০% market share লাভ  করে ।
 ক্রেতাদের চাহিদার ও পছন্দের শীর্ষে নোকিয়া চলে আসে। Flagship mobile phone Nokia 1100 এবং1110 ও আরও অনেক মডেল সহ নোকিয়া ফোন এর চাহিদাই সবচেয়ে বেশি ছিল। এর প্রভাব এ ধীরে ধীরে তাদের জনবল, প্রচার, মার্কেট শেয়ার ইত্যাদি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে।
সময়ের সাথে সাথে নোকিয়া যখন মার্কেট বৃদ্ধি করছিল কিন্তু ধীরে ধীরে তাদের competitor  ও মোবাইল বাজারে  প্রবেশ করা শুরু করে।  Samsung, Oppo, Vivo, Xiaomi  Intex ইত্যাদি কোম্পানিরা ধীরে ধীরে তাদের ব্যবসা শুরু করে। তবুও ২০০৮ এ নোকিয়া এর বিক্রয় তাদের অন্যতম সেরা বিক্রয় ছিল। এদিকে আমেরিকা ও ইউরোপ এ এই সময় গুগল ও  Android এর সূচনা হয়। এর ফলে আমেরিকা ও ইউরোপ এ নোকিয়া এর বিক্রয় ধীরে ধীরে কমতে শুরু হয়। কিন্তু তখনও এশিয়া ও এর আশেপাশে নোকিয়া এর আধিপত্য এ বিরাজমান ছিল। কিন্তু সেই সময় ইন্ডিয়া ও চায়না এর কোম্পানি গুলো ফ্লিপ ফোন বাজারে নিয়ে আসে। সেই সময়ে এই ফ্লিপ ফোন ছিল ফোনের জগতে এক ইউনিক সংযোজন। ওইদিকে ইউরোপ আমেরিকায় গুগল অ্যাপেল এর চাহিদা বাড়তে থাকে এদিকে এশিয়ান দেশ গুলোতে ফ্লিপ ফোন জনপ্রিয় হওয়া শুরু হয়।
ধীরে ধীরে ছোট ছোট চীনা মোবাইল কোম্পানিগুলো খুব দ্রুত বাজারে নতুন নতুন মডেলের মোবাইল ফোন নিয়ে আসা শুরু করে। কোনও Competitive Advantage চিরস্থায়ী নয়। সব Competitive Advantage এরই একটা Limited lifetime থাকে। এই পর্যায়ে এসে নোকিয়া তাদের যে ফিল্ড এ Competitive Advantage ছিল (feature phone) সেখানে প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
চীনা মোবাইল কোম্পানিগুলো খুব দ্রুত বাজারে নতুন নতুন মডেল এর মোবাইল ফোন কম দামে নিয়ে আসতে সক্ষম ছিল বলে ধীরে ধীরে ইউরোপ আমেরিকান কোম্পানিগুলো চীনে তাদের উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা শুরু করে ও কম দামে মোবাইল ফোন নিয়ে আসতে থাকে।  
এই পর্যায়ে এসে ৩ টা category সৃষ্টি হয়ে যায়। সেগুলো হল High end, Mid-range, Low end. High end এ নোকিয়া ইনোভেশনের মাধ্যমে দ্রুত মোবাইল ফোন আনতে ব্যর্থ হচ্ছিল। Mid-range এ Android dominate করছিল ও low end এ চীনা মোবাইল কোম্পানি গুলো। এই পর্যায়ে এসে Competition Hardware এর পর্যায়ে না থেকে Software পর্যায়ে চলে যায়। কিন্তু নোকিয়া বিষয়টি বুঝতে দেরী করে ফেলে। ২০১০ পর্যন্ত অ্যাপল ও Android যথাক্রমে প্রায় ৩ লাখ ও প্রায় ১.২৫ লাখ Mobile application/ software নিয়ে আসে অন্যদিকে নোকিয়া Symbian ফোন নিয়েই তখনও পর্যন্ত পড়ে থাকে।
এদিকে  Android এমন একটা প্লাটফর্ম নিয়ে আসতে সক্ষম হয় যেখানে সব কোম্পানি তাদের প্লাটফর্ম ব্যবহার করে সফটওয়্যার/ অ্যাপ্লিকেশান বানিয়ে মোবাইল ফোনে ব্যবহার করতে পারবে। এর ফলে প্রায় সব মোবাইল ফোন কোম্পানি Android প্লাটফর্মে শিফট হয়ে যায়। ধীরে ধীরে পুরো ব্যবসায়িক ইকো সিস্টেম পরিবর্তন হয়ে যায় ও নোকিয়াকে পেছনে ফেলে স্যামসাং, এলজি, এইচটিসি এর মতো কোম্পানি গুলো মার্কেট লিডার হয়ে যায়।
এদিকে দেরিতে হলেও নোকিয়া software এর দিকে নজর দেয়া শুরু করে কিন্তু তারা গুগল এর android প্লাটফর্ম চয়েস না করে মাইক্রোসফট প্লাটফর্ম বেছে নেয়।  কিন্তু এখানেই তাদের ভুলটা হয় কারণ যদিও মাইক্রোসফট সফটওয়্যার তৈরি করে কিন্তু তাদের সেই সফটওয়্যার মোবাইল প্লাটফর্ম এর সাথে compatible ছিল না কখনই।  ধীরে ধীরে android প্লাটফর্ম তার বৈচিত্র্যময়তার জন্য জনপ্রিয় হতে থাকে ও যেসব কোম্পানি android প্লাটফর্ম ব্যবহার করে তারা জনপ্রিয় হতে থাকে। এভাবেই ধীরে ধীরে নোকিয়া মার্কেট থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করে।
এখানে মুলত গুগল একটি শক্ত ব্যবসায়িক ইকো সিস্টেম গড়ে তুলতে সক্ষম হয় যেখানে সফটওয়্যার owner, developer ও মোবাইল  Manufacturer এবং Google একযোগে Interdependence এর মাধ্যমে কাজ করতে পারবে যেখানে Hardware, Software, E-commerce, Search, Applications, Unified communication etc সবকিছুই বিদ্যমান থাকবে। নোকিয়া এই ধরনের ব্যবসায়িক Ecosystem গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয় প্রচেষ্টা সত্ত্বেও।
অনেকে মনে করে নোকিয়ার পতনের কারণ হচ্ছে নোকিয়া পরিবর্তনের চেষ্টা করে নি যেটা পুরোপুরি ভুল ধারনা। নোকিয়া তাদের  কাজে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছিল কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা ভুল দিকে ছিল।


No comments