Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Pages

Recent Writings

{latest}

ইভ্যালি ভাবনা - রাফিউ আহমেদ

  ইভ্যালি নিয়ে প্রথম অভিযোগটা ছিল এমন,  তারা গ্রাহকদের টাকা নিয়ে প্রোডাক্ট দেয় না, কোটি কোটি টাকা মাসের পর মাস আটকে রাখে, ব্যাংকে রেখে ইন্টা...

 


ইভ্যালি নিয়ে প্রথম অভিযোগটা ছিল এমন, 

তারা গ্রাহকদের টাকা নিয়ে প্রোডাক্ট দেয় না, কোটি কোটি টাকা মাসের পর মাস আটকে রাখে, ব্যাংকে রেখে ইন্টারেস্ট পায়, অন্যখানে খাটায়া টাকা পায় ইত্যাদি।  এটা নিয়ে কেউ কেউ বিশাল ক্যালকুলেশনও দেখায়া ফেলছিল। ম্যাথ করে দেখায় আনুমানিক মাসিক মুনাফা কত পায়। সেখানে আবার উৎসাহী কেউ কেউ এর সাথে Time value of money ও এডজাস্ট করে ফেলে।

 

  এখান থেকেই হুট করেই দেখা গেল তাদের টাকাই নাই! 

ইভেন একশ কোটিও নাই!  এখন সেই মানুষ গুলোই ভোল পাল্টায়া ফেলছে, ইভ্যালির টাকা নাই! ভাল কথা, কিন্তু সেই ম্যাথ গুলার কি হবে?  সে যাক, মেইন প্রশ্ন হচ্ছে, যদি ইভ্যালি অগ্রীম টাকা নিয়ে প্রোডাক্ট না দেয়, তাইলে তো টাকা তাদের বেশি থাকার কথা, কমলো কেন? কিভাবে? সেই টাকা গুলা আসলে কই? 

 

 সেই টাকা গুলা কই এটা বিরাট প্রশ্ন।  

 

উত্তর হিসেবে আসতে পারে,

 - তারা এতদিন প্রোডাক্টে ৫০% বা বিশাল ছাড় দিচ্ছিল সেখানে গেছে

 ( এখানে আপনাকে মনে রাখতে হবে, ৫০ ছাড় ইভ্যালি দিচ্ছে মানে তাদের হয়ত ২০-৩০% বহন করতে হয়। মেইন প্রোডিউসার অন এভারেজ ২০-৩০% ছাড় দেয়! আর বাল্ক এমাউন্টে ৩০-৬০% ছাড়ও দেয়!) 

 - গিফট ভাউচারে গেছে ( সেখানেও ৫০% এর মত ছাড়) 

- বিজনেস অপারেটিং  - ইত্যাদি  এখন আসা যাক, সেই আগের লুপে, তারা প্রোডাক্ট সাপ্লাই দেয় না, ইভেন গিফট ভাইচারেরও।   

 

তাইলে টাকা গুলা কই?

 

  এবার CEO সাহেবকে একটু দেখা যাক।

 

 আমি মোটামুটি অবাক হয়েছি উইকিতে উনার কোন প্রোফাইল নাই, ইভেন ইভ্যালির প্রোফাইলটাও যাচ্ছে তাই।  

 

"লেখাপড়া রাজধানীর রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। এইচএসসি শেষ করার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যানে স্নাতকোত্তর। তারপর ২০১১ সালে ঢাকা ব্যাংকে চাকরি। মাঝখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ। ঢাকা ব্যাংকে ৬ বছর থাকার পর ছেড়েছেন চাকরি।"  তিনি JU এর স্ট্যাটিস্টিক্স, DU এর IBA থেকে MBA করেন।  মোস্ট ইম্পোটেন্টলি তিনি ঢাকা ব্যাংকে প্রায় অর্ধযুগ জব করেন।  

উনার নিশ্চয়ই এটা বুঝাই আছে যে এই স্টাইলে ইভ্যালি বেশি দিন সাস্টেইন করবে না। তা ছাড়া উনি যেটা করতেছিলেন এটার একটা অংশকে বিজনেসের ভাষায় Dumping Pricing বলে।   

 

এটা হল এমন যে, বাজারে কম্পিটিশন বেশি হলে, স্বাস্থ্যবান ফার্ম গুলা দাম খরচের চেয়ে কমিয়ে ফেলে। অর্থাৎ স্বেচ্ছায় লস দিতে থাকে। এতে হয় কি, বাজারের অন্যান্য কোম্পানি গুলোরও টিকে থাকতে বা পণ্য বিক্রি করতে দাম খরচের চেয়ে কমাতে হয়। এবং যেহেতু তাদের আর্থিক অবস্থা ভাল না তাই বেশিদিন মার্কেটে টিকে থাকতে পারে না। এক সময় বিজনেস ফল করে বন্ধ করে দেয় বা জায়ান্ট ফার্ম গুলার একুইজিশনের কবলে পরে। যখন বিজনেস ছেড়ে দেয় ছোট ফার্ম গুলা, তখন ঐ ডাম্পিং প্রাইসিং শুরু করা স্বাস্থ্যবান ফার্মের বাজারে প্রতিযোগিতা কমে যায়, তখন সে পণ্যের দাম বাড়িয়ে একক মুনাফা করে। (ডাম্পিং প্রাইসিং নিয়ে জানতে: https://muktokotha2020.blogspot.com/2020/06/dumping-pricing-biborno-rafi.html)

 

সে যাক, প্রথমত দেশে ই-বিজনেস এখনো বড়ই হয় নাই, কম্পিটিশন অত নাই, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পোলাপান ফেইসবুক পেইজ খুলে লোকালি কিছু টাকা কামানোর ট্রাই করে, এই যা।  

এর মাঝে ইভ্যালির কেন ডাম্পিং প্রাইসিং স্ট্রাটেজি এডাপ্ট করতে হয়েছে সেটা মাথায় ঢুকে না।  কভিডের আগে চা খেতে খেতে বন্ধুবান্ধবদের আড্ডায় ভাবতাম, হয়ত ওরা মার্কেট শেয়ার বাড়িয়ে বিশাল ইনভেস্টমেন্টকে আকৃষ্ট করতে চাবে। তবে ইনভেস্টমেন্ট অনলি একটা সেক্টরের উপর ভিত্তি করে হয় না। বিশাল ডেবট দেখলে কেউ ইনভেস্ট করবে না।  

 তাদের ডাম্পিং প্রাইসিং স্ট্রাটেজি যে খুব একটা কাজ করে নাই তা বুঝা যায় বড় বড় পাবলিক ফিগারদের ফার্মে ইনক্লুড করা দেখে।  ভাই মানুষ কম টাকায় পাইলে তো আর তাহসান, মিথিলা, আয়মান সাদিক, ফারিয়া বা আরিফ আর হোসেইনকে বেচা লাগে না।   

 

সে যাক, যদি টাকা হাত বদল করে ব্যবসা করার চিন্তা করা হয়, যেমন ধরেন, A থেকে  ৬ মাসের জন্যে টাকা নিয়ে B কে দিলেন চার মাসের জন্যে,  B থেকে নিয়ে টাকাটা ভাগ করে C,  D, E কে দিলেন 2 মাসের জন্যে।  এরপর B, C, D, E থেকে টাকা নিয়ে ইন্টারেস্ট সহ, A কে দিলেন কিছু, F থেকে আরো নিয়ে B, G, H কে দিলেন কিছু... এভাবে চলতে থাকলো।

  এভাবেই ব্যবসায় ইন্টারেকশন বাড়ানো যায়।  অফিসে ব্যস্ততা বাড়বে, টাকা কত বাড়বে এটা প্রশ্ন হতে পারে।  

 

তবে এখনো কিন্তু সেই ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয় নাই,  টাকা গেল কই?  

 

সিইও সাহেব স্মার্ট হওয়ার কথা, বিজনেস নিয়ে ধারণা আছে,  বিজনেস নিয়ে পড়েছেন, ব্যাংকে জব করেছেন, ক্যাশ ফ্লো, মানি ম্যানেজমেন্ট, ব্যাংকিং সিস্টেম নিয়ে ধারণা তো আছেই, নেটওয়ার্কও বিশাল।  

ব্যাপারটা মানি লন্ডারিং পর্যন্ত না গেলেই হয়।  

 

তবে এখন যে অবস্থায় আছে, ইভ্যালিকে কেউ টাকা লোন দিবে না, ইনভেস্ট করবে না, তাদের স্থায়ী সম্পদও কম।  

এটা সংকট নাকি সুযোগ বুঝা যাবে কিছু দিন পর।  যদি আসলেই উনার ভাল কিছু করার উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ একটা ক্রাইসিস করে ফেলছে। ব্যাপারটাকে আরো স্মার্টলি হ্যান্ডেল করতে পারতো। 

 

বাংলাদেশে স্টার্ট আপ গুলা বড় হয় কম। তাদের লালন করার সুযোগ আছে। এটা না করে এমন সিচুয়েশনে ফেলাটা একটু ভাবনার বিষয়।  আর যদি সিইও সাহেবের কার্যকর প্ল্যান না-ই থাকে, তাহলে এখন অন্তত যা সেইভ করা যায় তা-ই গ্রাহকের লাভ।  দেখা যাক, আসলেই কি হয়। 

 

 বিঃদ্রঃ যারা ইভ্যালিতে জব করে, সবার বিজনেস প্ল্যান, ফিন্যান্সিয়াল কন্ডিশন জানার কথা না। তাই তাদেরকে মক করার ভাল ম্যানার না।

No comments