"বাকস্বাধীনতা" একটা জরুরী এবং খুবই 'পিচ্ছিল' একটা ব্যাপার! বাকস্বাধীনতা কী? - এটার উত্তরে বেশির ভাগ মানুষই সচেতন বা অ...
"বাকস্বাধীনতা" একটা জরুরী এবং খুবই 'পিচ্ছিল' একটা ব্যাপার!
বাকস্বাধীনতা কী?
- এটার উত্তরে বেশির ভাগ মানুষই সচেতন বা অসচেতন ভাবে বলে থাকে, যা ইচ্ছা/মত প্রকাশের স্বাধীনতাই বাকস্বাধীনতা।
সাধারণ অর্থে এটা মেনে নিলেও প্রায়োগিক দিক থেকে এটা আর খাটে না। আপনি যা ইচ্ছা তা বলতে পারবেন না। বরং এটা ভয়াবহ একটা ব্যাপার। আপনার যা মনে আসছে, যা কিছুতে খুশি হচ্ছেন তা বলে দিচ্ছেন!
কী বলতে পারবেন এটা সহজেই বুঝা যাবে যদি আমরা বুঝে যাই কী বলা যাবে না।
তাহলে, কী বলা যাবে না?
একজন ধর্ষক কি ধর্ষণের পক্ষে প্রচারণা চালাতে পারবে?
কিংবা, আপনি কাউকে অপছন্দ করলেই তাকে গালাগাল দিতে পারার অধিকার চান?
খুনী আপনার আত্মীয় হলেই তার পক্ষে জনমত সৃষ্টি করা যাবে?
সোজা উত্তর হচ্ছে "যাবে না"।
অর্থাৎ অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে অন্যায় ভাবে মিথ্যা ও অনৈতিকতা প্রচার বাকস্বাধীনতার আওতাভুক্ত হবে না।
অর্থাৎ বাক বা মুখে যা আসবে তা বলাই বাকস্বাধীনতা না।
বাকস্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগের আগে তাই এই ব্যাপার গুলো নিশ্চিত করতে হবে।
এখন আসা যাক, যা বাদ দেওয়ার, তা বাদ দিয়ে অন্যসব বলাই বা বলতে পারাই কি বাকস্বাধীনতা?
এখানে শুধু বলতে পারাই বাকস্বাধীনতা হলে ব্যাপার টা সুন্দর হয় না।
বরং বাকস্বাধীনতার অন্তত দু'টা অংশ থাকা উচিত।
১। " যতটুকু" বলা যায়, তা কোন বাধা ছাড়াই বলতে পারা।
২। কথা/মতামত যৌক্তিক হলে তার মূল্যায়ন করা।
এই দু'টা অংশই প্রয়োজন। আমরা প্রায়শই দ্বিতীয় অংশটা বাদ দিয়ে যাই। কিন্তু এটা জরুরি। ধরুন, আপনি কথা বলেই যাচ্ছেন, বলেই যাচ্ছেন। বলে তৃপ্তি পাচ্ছেন। কিন্তু এত কথা বলেও কোন লাভ হচ্ছে না। তাহলে তো আর হলো না।
তবে এটা ঠিক, বলতে বলতে, এক সময় মূল্যায়ন করার জন্যে 'Social Pressure' দেওয়া যায়।
অনেক বড় ভূমিকা হয়ে গেল। আজকের লেখার উদ্দেশ্য বাকস্বাধীনতার সংজ্ঞায়ন না।
বাকস্বাধীনতা আছে কি নেই এটা কীভাবে বুঝবেন?
যখন আপনি কথা বলবেন এবং বাধার সম্মুখীন হবেন তখনই বুঝবেন স্বাধীনতা নেই।
সাধারণত সবাই কথা বলে না, লিখে না। বেশিরভাগ মানুষ এসব নিয়ে ভাবে না। গুটিকয়েক মানুষ ভেবে অন্য সবাইকে "Push" করে।
আজকে প্রবন্ধ সেই গুটিকয়েক মানুষ নিয়েই।
Game of thrones টিভি সিরিজের ফিলোসোফিটা এক্ষেত্রে কাছাকাছি। এখানে কয়েকজন মানুষ রাজার পর রাজার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে স্বপ্ন দেখে এমন একজন শাসকের যে কিনা অন্যদের মত রক্তপিপাসু, ক্ষমতালোভী, নির্মম হবে না বরং সাধারণ মানুষের জন্যে কাজ করবে।
তাই তারা এক রানীর পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করে। রানী মানবতাবাদী। মানুষের জন্যে অনেক ভালবাসা তার।
একদম শেষে এসে দেখা যায়, সব রাজার উপর রুষ্ট হয়ে তারা যে রানীকে কাউন্সিল করছে যুদ্ধ জয়ের জন্যে, যুদ্ধ জয়ের পর দেখা যায় আগের নির্মম রাজা আর নতুন রানীর মধ্যে কোন তফাৎ নেই। বরং এরা সবাই একই।
যদিও এটা টিভি সিরিজ তবে বাস্তবে অহরহ এমন অবস্থা দেখা যায়।
যারা বাকস্বাধীনতা নেই বলছে, বাকস্বাধীনতার জন্যে সবাইকে সচেতন করছে,
তারা ভাল কাজ করছে। এটা একটা মৌলিক অধিকার।
তবে তারা নিজেরাই সময় আসলে "বাকস্বাধীনতা দিবে কিনা/ বাকস্বাধীনতার দুটা অংশই নিশ্চিত করবে কিনা" এটাও একটা জরুরী প্রশ্ন।
অর্থাৎ,
কথা বলতে দিবে কিনা,
কথা বলা গেলে সে কথার মূল্যায়ন নিশ্চিত হবে কিনা।
[এক্ষেত্রে অনেকে বলতে পারে,
আগে তো বর্তমানে বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত হোক এরপর এই প্রশ্ন আসুক। এটা সঠিক না। মানুষের সেন্টিমেন্ট জরুরী। প্রথমবার যাদের স্বপ্ন দেখিয়ে নিয়ে নিরাশ করবেন, পরে আর তারা স্বপ্নই দেখবে না।
স্বপ্ন দেখা বন্ধ হওয়ার চেয়ে দেরী করে স্বপ্ন দেখা ঢের ভাল।]
নাকি, তখন আবার ভোল পাল্টিয়ে বলবে, "বাচ্চাদের মত প্রকাশকে সম্মান জানিয়ে জোর করে না খাওয়ালে বাচ্চার স্বাস্থ্য খারাপ করবে!"
এটা একটা মারাত্মক সমস্যা।
আমরা মনে করি, শুধু "আমিই" সঠিক ও ভুল কাজ কোনটা তা "সঠিকভাবে" জানি!
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয় কি,
মানুষের বড় অংশটাই এসব ব্যাপারে সচেতন থাকে না। তখন সচেতন মানুষ গুলো এই "অসচেতন" মানুষদের "সচেতন" করার সময় কাকে কতটুকু সচেতন করবে তা নিজের বা নিজেদের লাভ মোতাবেক ঠিক করে থাকে।
আপনি/আপনারা যদি ঘরে/বাসায়/সংগঠনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে না পারেন, তাহলে অন্যের কাছ থেকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেন চান?
"স্বাধীনতা", " সমতা", "ন্যায়" এই শব্দগুলো সহজ শুনালেও এগুলোর প্রায়োগিক দিক এত জটিল যে অধিকাংশ মানুষ বুঝতে পারে না। বা বুঝার চেষ্টা করে না।
এই না বুঝা মানুষগুলোকেই গুটি বানিয়ে সবাই দাবা খেলে।
No comments