দুঃখ নিয়ে ভাবছিলাম। দুঃখ ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং। সবাই কমবেশি নিজেকে কষ্টে আছে ভাবে। কষ্টের নানান দিক বানিয়ে ফেলে, রঙ দেয়। এরপর নিজের মত ...
দুঃখ নিয়ে ভাবছিলাম।
দুঃখ ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং। সবাই কমবেশি নিজেকে কষ্টে আছে ভাবে। কষ্টের নানান দিক বানিয়ে ফেলে, রঙ দেয়। এরপর নিজের মত করে সবাই দুঃখবিলাস করে।
কেউ আকাশ দেখে, কেউ কান্নাকাটি করে, কেউ হাত কাটে, কেউ বৃষ্টিতে ভিজে, কেউ ভবঘুরে হাটে, সিগারেট ফুঁকে। কেউ আবার কিছু করে না; সব স্বাভাবিকই থাকে মনে হয়, রাত নির্ঘুম কাটে, এই যা।
ভাবছিলাম এই দুঃখ নিয়েই। সবাই দুঃখে আছে। কত শোক চারপাশে!
যদিও এমন হওয়ার কথা ছিল না। প্রকৃতি সাধারণত জিরো বা শূন্য পছন্দ করে। আপনি মাটি কেটে একটা জায়গা উচু করলে, অন্য জায়গাটা নিচু হয়ে যাবে। যোগফল শূন্য। কেউ হাসবে কেউ কাঁদবে, যোগাযোগ শূন্য। কেউ দুঃখে থাকবে কেউ সুখে, যোগফল শূন্য।
এই যোগফল এখন কেন শূন্য হচ্ছে না?
আমরা বাঁচি কেন? আমরা পড়াশোনা শিখি কেন? কেন ৩০ জনের বাসে তীব্র গরমে ৫০ জন মিলে সিদ্ধ হয়ে ভার্সিটি যাই? কেউ মোটা মোটা বই গলদ করণ করি? একটা চাকরির আশায় হাজার হাজার মানুষের যুদ্ধ?
তারপর বিয়ে, বাচ্চা, বাচ্চা সেই যুদ্ধে যোগ দিবে। বাচ্চা যত ভাল যুদ্ধ বুঝবে, বাবা তত দ্রুত পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার প্রস্তুতি নিবে!
এমন কেন?
যুদ্ধ জয়ের বা পরাজয়ের শেষে, মারা যাওয়ার কিছুক্ষণ আগেও কি চারপাশে তাকিয়ে বলা যায় ভালই কাটালাম গত ৬০/৭০ বছর?
নাকি শেষ বয়সে মৃত্যুর জন্যে অপেক্ষার সময়টা কাটে তীব্র আফসোস করে?
ভাবছিলাম দুঃখ নিয়ে; আজকাল ভাবনাগুলো এক জায়গায় স্থির থাকে না। অবশ্য স্থির থাকার বাধ্যবাধকতাও নেই। সবাই তো নিজের মত ছুটে, চিন্তাভাবনার আর দোষ কী!
একবার একটা সাইকোলজির সেমিনারে অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। সাইকোলজি ভালই লাগে। সেখানে "মাল্টি পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার" নিয়ে একটা স্পিচ শুনি। যদিও আগেই জানতাম, তবে এতটা জানতাম না। ভীতু আর দুঃখি মানুষগুলোর নাকি মাল্টি পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারে ভুগার সম্ভাবনা বেশি।
আমার কি মাল্টি পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার আছে?
যা এখনে পাইনা, তা নিয়ে কি একটা একটা কাল্পনিক পৃথিবী বানিয়ে ফেলি? যা ভাল লাগে, যা পছন্দের, যা তীব্র আগ্রহের, যেসব কিছু 'তীব্র অযৌক্তিক' তা সবগুলো সেই কাল্পনিক পৃথিবীতে নিয়ে ইচ্ছামত সাজাই?
নিজের ডিসঅর্ডার নাকি নিজে ধরা যায় না।
সব দুঃখি মানুষের কি এমন একটা একটা একান্ত ব্যক্তিগত পৃথিবীর আছে? তারা নিজেইরাই সে পৃথিবী ইচ্ছামত সাজায়?
সে পৃথিবীর কি সব ফুল 'সাদা গোলাপ'?
ইচ্ছা হলেই হাস্যজ্বল রোদ, ইচ্ছা হলেই ঝড়?
সেখানে ইচ্ছা হলেই নদী চলে আসে, ইচ্ছা না হলেই হুশ,
পছন্দের মানুষগুলো সব সেই পৃথিবীতে থাকে,
সেখানে ইচ্ছা হলেই অনন্ত জোসনা, যতক্ষণ ভাল লাগবে চাঁদ থাকবে, চাইলেই তেতুল বন হাজির হবে, অথবা সমুদ্র!
এটাই কি দুঃখের সবচেয়ে তীব্রতর স্তর?
সে যাক,
আজকাল সুখ দুঃখের যোগফল শূন্য হয় না কেন?
কারো রাত নির্ঘুম কাটলে কারো রাতে ভাল ঘুম হয় না কেন?
দুঃখই সম্ভবত একমাত্র অপছন্দের জিনিস, যা মানুষ নিজেরাই পছন্দ করে বাছাই করে। মানুষগুলো কী অদ্ভুত!
'কারো কারো' ভাল থাকা উচিত,
কারণ অন্য 'কেউ কেউ' ভাল নেই।
যোগফল শূন্য হোক।
No comments