গলির মোড়ে, পাড়ার চায়ের দোকানে প্রায়শই বড় বড় ইস্যু নিয়ে আলোচনা হতে দেখা যায়। আমেরিকার নির্বাচন, ম্যানিলা ট্রাম্পকে ডিভোর্স দিবে কিনা, আল ...
গলির মোড়ে, পাড়ার চায়ের দোকানে প্রায়শই বড় বড় ইস্যু নিয়ে আলোচনা হতে দেখা যায়। আমেরিকার নির্বাচন, ম্যানিলা ট্রাম্পকে ডিভোর্স দিবে কিনা, আল কায়দা নাকি আইএসএস কে বেশি শক্তিশালী !
শুধু পাড়ার দোকান আর গলির মোড়ে না; বেশিরভাগ আড্ডায়, ভার্সিটির কফি শপে, ক্লাবে আলোচনা হয় জাতিসংঘ কেন ঠিকঠাক কাজ করছে না, কেন বিশ্বব্যাংক খারাপ, কী করলে ঠিক হবে ইত্যাদি।
কিন্তু কেন? কেন আলোচনার জন্যে মানুষ দেশের নির্বাচন বাদ দিয়ে আমেরিকায় যায়? কেন ভগ্ন, রুগ্নপ্রায় নিজের ক্লাব বাদ দিয়ে বিশ্বব্যাংক ঠিক করতে চায়?
ব্যাপারটা কিঞ্চিৎ মজার। এখানের মানুষ মোটামুটি ঝামেলা পোহাতে চায় না। কিন্তু মারাত্মক আড্ডাবাজ এই মানুষগুলো আবার নিজের জ্ঞানের প্রকাশ করতে মরিয়া!
সাধারণত আপনি যদি বড় ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন, এক্ষেত্রে তা ভুল হওয়া বা সত্যতা যাচাই করা সম্ভব না।
ব্যাপারটা বুঝার জন্যে একটা গল্প শোনা যাক,
মি: ছলিম কলিম সাহেবকে বলছেন, 'জনেন কলিম সাহেব, আপনি কোন ভাবে পানির নিচে ১০ মিনিট দম আটকে থাকতে পারলে ভবিষ্যৎ দেখতে পারবেন'।
কলিম সাহেব - ' কিন্তু এতক্ষণ তো দম আটকে থাকা সম্ভব না'!
মি: ছলিম - 'হ্যাঁ, সবাই তো আর ভবিষ্যৎ দেখতে পারবে এমন না! যদি পারেন, তাহলে ভবিষ্যৎ দেখতে পারবেন'।
এই গল্পে আপনি বিশ্বাস অবিশ্বাসের জন্যে তা খতিয়ে দেখা সম্ভব না।
এবার পূর্বের প্রসঙ্গে আসা যাক।
দেশের জাতীয় নির্বাচন একটা স্পর্শকাতর ব্যাপার হয়ে উঠছে। এটা নিয়ে পাড়ার দোকানে গলা খুলে আলোচনার চেয়ে আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে কথা বলা কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করা যায়। তাছাড়া আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে ইচ্ছামত হাইপোথিসিস দেওয়া যায়! এটা করলে ট্রাম্প জিতে যেতো, ওটা করার জন্যে ট্রাম্প হেরে গেছে ইত্যাদি।
এখন ধরেন যে মি: আবুল তার বউকে মারধোর করে চায়ের দোকানে আপনার পাশে বসে আছে, এক্ষেত্রে আপনি পারিপার্শ্বিক সম্পর্ক ঠিক রাখতে ট্রাম্পের ডিভোর্সের আলোচনা শুরু করবেন। কারণ আবুল সাহেব আপনার পাশে বসা, উনাকে বউ মারতে নিষেধ করার মত স্বদিচ্ছা বা দৃঢ়তা আপনার নেই।
আবার ধরুন,
একটা রুগ্ন ক্লাবের প্রেসিডেন্টের জন্যে বিশ্বব্যাংকের দুর্বলতা নিয়ে বক্তৃতা দেওয়া সহজ। কারণ বক্তৃতার বিষয়ে যত ছোট হবে, কাছের হবে তত তা নিজের ক্ষেত্রে চলে আসবে, তখন বাস্তবিক ভাবে ঠিক করার দায়িত্বও নিজের কাছে চলে আসবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাদের সমস্যা সমাধানের কোন ইচ্ছা বা দক্ষতা কিছুই নেই। তাই সবচেয়ে নিরাপদ হলো বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফ, জাতিসংঘের সমালোচনা করা।
ক্লাসে "বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থা বিশ্লেষণ" এর চেয়ে শিক্ষকরা "গ্রেট ডিপ্রেশন" বা "গ্লোবাল ইকো-পলিটিক্যাল অবজার্ভেশন" বিষয়ে লেকচার দিতে বেশি আগ্রহী হওয়াই এই জন্যে স্বাভাবিক।
বড় বড় ইস্যু নিয়ে আলোচনার অর্থ কেউ বেশি জানে এমন না, যেহেতু আমরা প্রায় সবাই কমবেশি আড্ডাবাজ। বড় বড় ইস্যু নিয়ে আলোচনার বড় সুবিধার কথা যেমন নিজের অক্ষমতা লুকানো, দায়িত্ব না নিতে চাওয়া ইত্যাদি মাথায় রেখেই তারা এই কাজটা করে।
আসলেই। ভালো লিখেছেন।
ReplyDelete