জো বাইডেন তথা ডেমোক্রেটিক পার্টির একটা বড় নির্বাচনী প্রচারণা ছিল জামাল খশেগী হত্যায় সৌদি যুবরাজের দায়। যেহেতু রিপাবলিকানরা এই ব্যাপারে চুপচ...
জো বাইডেন তথা ডেমোক্রেটিক পার্টির একটা বড় নির্বাচনী প্রচারণা ছিল জামাল খশেগী হত্যায় সৌদি যুবরাজের দায়। যেহেতু রিপাবলিকানরা এই ব্যাপারে চুপচাপ ছিল, জাতীয় নির্বাচনে ডেমোক্রেটরা ভালই একটা ফায়দা নেয়।
কিন্তু সমস্যাটা হয়ে যায় অন্য জায়গায়! ডেমোক্রেসির সবচেয়ে বড় ডিলেমা ক্রিয়েট হয়ে যায় যখন দল বনাম রাষ্ট্র মুখামুখি হয়ে যায়! বিশেষ করে এই গ্লোবালাইজেশনের যুগে, যখন আপনি চাইলেই একা থাকতে পারবেন না, যেমনটা আমেরিকা মনেরো ডক্ট্রিনের মাধ্যমে মোটামুটি বিশ্ব থেকে সেপারেশনে থেকে নিজেদেরকে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নয়ন করে। তবে সেটা প্রায় এক দেড় শ বছর আগের কথা। এখন অনেক কিছু পাল্টেছে।
সৌদি আরবের পেট্রো ডলার দিয়ে আমেরিকা ভালই লাভবান হয়েছে। তাই সারাবিশ্বে গণতন্ত্রায়নের কথা বললেও সৌদি নিয়ে ঘাটাঘাটি করে নাই খুব একটা। যদিও সৌদিতে কয়েকটা মাইল্ড রেভোলিউশনের কথা মিডিয়ায় এসেছে, তবে সেটা ঐ পর্যন্তই।
সৌদিকে মোটামুটি পূর্ব দিকে ঠেলে দিয়েছে ডেমোক্রেটিক পার্টি। বিশেষ করে যখন তাদের সাথে সালমানের সম্পর্ক ভাল না।
আমেরিকা কিংবা ডেমোক্র্যাটদের সমস্যা হল,
তারা সালমান বা সৌদিকে বাঘের বাচ্চা হিসেবে ২০/২৫ বছর ধরে লালন পালন ও শাসন করে এসে ভাবছে এখনো তারা বাচ্চাই রয়ে গেছে। অথচ এই ২০/২৫ বছরে তারা যে যৌবনে পা দিয়েছে সেটা খেয়াল করেনি।
ফলাফল দেখাই যাচ্ছে,
গতকাল (০৬-১২-২২) আমেরিকার এক আদালত জামাল খশেগীর খুনের দায় থেকে সালমানকে মুক্তি দিয়েছে। তাতেও খুব একটা লাভ হবে না। এর কয়েকটা কারণ আছে-
- বিশ্বাস নষ্ট হয়ে গেছে। সৌদি আমেরিকার অনেক অনিয়মে পাশে ছিল৷ তারা ভেবেছিল আমেরিকাও পাশে থাকবে। কিন্তু আমেরিকা নিজে বদমাইশি করলেও বিশ্বব্যাপি সুশাসনের কথা প্রচার করায় কিছুটা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড মেন্টেন করে চলে। সেটা ইয়েমেন যুদ্ধ হোক কিংবা জামাল খশেগীই হোক।
- সৌদি আর আমেরিকার দালাল হয়ে থাকতে চায় না। তারাও নেতৃত্বে আসতে চায়। সম্ভাবনাও আছে প্রচুর। টাকা আছে, সম্পদ আছে, মুসলিম দেশের সাপোর্ট আছে, ডেমোগ্রাফিক অবস্থান ভাল!
- আমেরিকার ইউনিপোলার সম্মান হারানোর পর যখন বিশ্ব মাল্টি পোলারে পা দিয়েছে, তখন অনেক অপশন সৃষ্টি হয়েছে। যেমন চীন, রাশিয়া! এবার সৌদি দরকষাকষি করতে চায়।
- জামাল খশেগী ইস্যুতে আমেরিকা সালমানকে দায় মুক্তি দিতে অনেক সময় নিয়ে ফেলেছে। এটা একটা বিশ্বাস থ্রেট!
সালমান যুবরাজ থেকে প্রধানমন্ত্রী পদ নেওয়ার অন্যতম কারণও এটা, কূটনীতিক দায়মুক্তি ভোগ করা, যদি আমেরিকা পুরোপুরিভাবে সালমানকে ফাঁসিয়ে দেয়। আর এই সময়ে চীন রাশিয়ার কূটনীতি কিন্তু থেমে থাকেনি। সম্ভাবতই সৌদি পূর্বে মনোনিবেশ করছে।
পরিস্থিতি যা-ই হোক,
আমরা মূলত একটা বহুমাত্রিক স্নায়ুযুদ্ধের দিকে আগাচ্ছি। আর সৌদি যদি আমেরিকা থেকে মুখ ফিরায়,
আমেরিকা হয়ত তখন ভারতকে জাতিসংঘের স্থায়ী পরিষদের সদস্য করার জন্যে তোড়জোড় করবে।
এর মাধ্যমে আমেরিকা চাইবে চীন ভারত সমস্যা আরো প্রকট করে দিতে। যা মূলত দক্ষিণ এশিয়ায় একটা দীর্ঘমেয়াদি 'টেনশন' সৃষ্টি করবে।
যদিও ক্ষমতার দ্বন্দ্বে ব্যালেন্স অফ পাওয়ার সবচেয়ে ভাল অবস্থা, তবুও সবাই জিততেই চায়। কেউ ব্যালেন্স চায় না।
বেঁচারা জামাল খশেগী, যার মৃত্যু নিয়ে পুরো বিশ্ব রাজনীতি করতে ব্যস্ত, তাকেই সবাই বেশ কিছু দিনের মধ্যেই ভুলে যাবে!
সবচেয়ে বড় ভিক্টিম সম্ভবত জামাল খশেগী-ই!
|| রাফিউ আহমেদ ||
No comments