বেশ কয়েক বছর ধরেই সৌদিতে একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। যেমন: - তেলের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করা। - নিউক্লিয়াস এনার্জি ও ওয়ারহেডের জন্যে মর...
বেশ কয়েক বছর ধরেই সৌদিতে একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। যেমন:
- তেলের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করা।
- নিউক্লিয়াস এনার্জি ও ওয়ারহেডের জন্যে মরিয়া হওয়া - এডুকেশন সিস্টেমের উপর জোর দেওয়া।
- টেক ও গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে ইনভেস্ট করা
- ফুটবল, ক্রিকেট সহ কালচারাল & বিজনেসে আগ্রহী হওয়া।
- ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটিতে ভোকাল হওয়া।
- ইত্যাদি।
এর প্রধান কারণ মূলত জামাল খসেগী হত্যাকাণ্ড ও আমেরিকার প্রতিক্রিয়া।
সৌদি আমেরিকাকে বন্ধু ভেবে এসেছিল, আবার আমেরিকাও তেল, মুসলিম বিশ্বে প্রভাব রক্ষা সহ নানান ইস্যুতে সৌদি নিয়ে ঘাটাঘাটি করেনি বরং সবখানে গণতন্ত্রের বুলি আওড়ালেও সৌদি নিয়ে সবসময় চুপ ছিল।
কিন্তু সম্পর্কের মোড় ঘুরিয়ে দেয় জামাল খসেগী হত্যাকাণ্ড। (যারা জানেন না: ক্লিক)
এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুবরাজ সালমানকে দায়ী করে এবং সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠে। যদিও ট্রাম্প প্রশাসন ব্যাপারটা পুনরায় সহজ করার চেষ্টা করে। তবে সমস্যা বেঁধে যায় গত প্রেসিডেন্ট ইলেকশনে।
আমেরিকা সৌদিকে ডিপলোম্যাটিক ফ্রেন্ড ভাবলেও আমেরিকান জনগণ সৌদিকে সেভাবে বন্ধু ভাবতে পারেনি। আর যেহেতু ট্রাম্প প্রশাসন জামাল খসেগী হত্যাকাণ্ড চেপে গেছে, বাইডেন সাহেব ও তার দল নির্বাচনী প্রচারণা ও ইশতিহারে জামাল খসেগী হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু নিরপেক্ষ বিচারের প্রতিশ্রুতি দেন এবং নির্বাচনী প্রচারণায় প্রচুর হাইলাইট করেন।
এটা মূলত দেশের জনগণকে খুশি করে ডোমেস্টিক পলিটিক্সে ভোট জিতার জন্যে করা, যদিও বাইডেন শেষমেশ জিতেই যায়। তবে এর প্রভাব পড়ে সারাবিশ্বে!
যুক্তরাষ্ট্রের মত একটা রাষ্ট্রের রাজনীতিকে আসলে ডোমেস্টিক আর ইন্টারন্যাশনাল এই দুইভাবে আলাদা করা সম্ভব না।
বাইডেন জিতে যাওয়ার পরে জামাল খসেগী নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হলে সৌদি নাখোশ হয়৷ এমন কী সালমানকে সৌদি বাদশা প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করে যাতে কূটনীতিক সুরক্ষা পায়।
এটা মূলত সৌদিকে একটা বড় শিফটিং করে ফেলে। অনেকটা আদুরে ছেলের হঠাৎ বাবা মারা যাওয়ার মত অবস্থা। খুব দ্রুত দায়িত্ব আর বাস্তবতা বুঝা শুরু করে। মূলত এর পর থেকেই সৌদি চীন ও রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী হয়। ইউক্রেন রাশিয়ান যুদ্ধের ফলে সে সম্পর্ক আরো জোরদার হয়।
ফলাফল:
ফলাফল বহুমুখী হলেও এখানে শুধু রাজনৈতিক ফলাফল নিয়ে আলোচনা করা হল।
- সৌদি আমেরিকার মদদে ইরান বিরোধী থাকলেও, চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি
- ইরান সম্পর্কের পুন:সূচনা হয়।
- সৌদি-ইরান-তুরস্ক মিলে মিডেল ইস্টে শক্ত বলয় সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা।
- সিরিয়ার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রত্যাবর্তন।
- চীন - রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি।
- মিডেল ইস্ট যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিবের বাইরে চলে যেতে পারে।
- ইসরায়েলের জন্যে হুমকি সৃষ্টি
- চীন রাশিয়া সৌদি ইরান তুরস্ক এক হলে এশিয়ান রাজনীতিতে আমেরিকার প্রভাব হ্রাস।
- আমেরিকা দক্ষিণ চীন সাগরে প্রভাব বাড়াতে মরিয়া হয়ে যাবে।
- আমেরিকা এশিয়ায় ভারতকে এলাই হিসেবে চাবে, যদিও ভারত সে সুযোগে দুপক্ষ মুখ দিবে। তবে মোদির 'প্রতিবেশী প্রথম' স্ট্রাটেজিতেই থাকলে, আশেপাশের পুরো আমেরিকা বিরুদ্ধ বলয়ের বাইরে যাবে না।
- যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র ইসলাম ও সমাজতন্ত্রকে একই চোখে ঘৃণা করে, বিশ্ব যুদ্ধ ও অস্ত্র প্রতিযোগিতার দিকে এগুবে।
- আফ্রিকা মহাদেশে এশিয়ান দেশ গুলোর প্রভাব বাড়বে
- আমরা খুব দ্রুত জাতিসংঘের অকার্যকরতা এবং মহাদেশ ভিত্তিক সংগঠন দেখতে পাব। অর্থাৎ ৪/৫টা দেশের জোটের চেয়ে এশিয়া, আফ্রিকা মহাদেশ ভিত্তিক জোট দেখতে পাব।
- এতে বর্ডারলেস ওয়ার্ল্ড কনসেপ্ট আরো জনপ্রিয় হবে।
- হিউম্যাটেরিয়ান এইডের পরিমাণ বাড়বে।
- ইত্যাদি
মজার ব্যাপার হচ্ছে, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আপনি লাভ ও ডিপ্লোমেটিক রিলেশন করলে ইথিক্স নিয়ে খুব একটা কথা বলতে পারবেন না। আপনাকে সবসময় প্রোফিটই দেখতে হবে। আর, রাজনীতিতে 'বেস্ট ফ্রেন্ড' বলে কিছু নেই। একটা ছোট ঘটনাও বৈশ্বিক সম্পর্কে বিশাল টানাপোড়েন সৃষ্টি করতে পারে।
No comments