নাইজার পরিচিতি দেশ: নাইজার, আনুষ্ঠানিকভাবে 'নাইজার প্রজাতন্ত্র' পশ্চিম আফ্রিকার স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। এই দেশটির নাম রাখা হয়েছে না...
নাইজার পরিচিতি
দেশ: নাইজার, আনুষ্ঠানিকভাবে 'নাইজার প্রজাতন্ত্র' পশ্চিম আফ্রিকার স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। এই দেশটির নাম রাখা হয়েছে নাইজার নদীর নামানুসারে।
এর দক্ষিণে নাইজেরিয়া ও বেনিন, পশ্চিমে বুর্কিনা ফাসো ও মালি, উত্তরে আলজেরিয়া ও লিবিয়া, এবং পূর্বে চাদ। নাইজারের রাজধানীর নাম নিয়ামে।
নাইজার অভ্যুত্থান ও ফ্রান্সের মাথাব্যথা!
নাইজারের এক্স প্রেসিডেন্টের সাথে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের ভাল সম্পর্ক ছিল। অবশ্য ভাল সম্পর্কে না বলে বলা উচিত ফ্রান্সের আজ্ঞাবহ ছিলেন। সম্প্রতি প্রেসিডেন্টস গার্ডের প্রধান ক্যু'য়ের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করলে সবচেয়ে বেশি হতাশ হয় ফ্রান্স।
মুলত ফ্রান্স পুরো আফ্রিকা জুড়েই এখনো একটা শ্যাডো-কলোনিয়াজম চালু রেখেছে। এ প্রসঙ্গে আরেকদিন লিখব আশাকরি।
ফ্রান্স এবং তার ইউরোপীয় মিত্ররা মালি ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলে, প্যারিস সাহেলে ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নাইজারের সাথে তাদের সামরিক সহযোগিতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। তবে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণ পরিস্থিতি পাল্টে ফেলেছে। কারণ প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এর সাথে ফ্রান্সের সম্পর্ক ভাল থাকায় নাইজারের অভ্যুত্থান সমর্থকরা ফ্রান্স বিরোধী হচ্ছে। এছাড়া পুরো আফ্রিলাতেই ফ্রান্স বিরোধী একটা মনোভাব কম হোক বেশি হোক রয়েছে।
ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ফ্রান্স তাদের সকল ধরণের এইড বন্ধ করে দিয়েছে। এবং নাইজারকে কোণঠাসা করতে ফ্রান্সের কাজ শুরু করাও অবাস্তব না।
এছাড়া একটা ব্যবসায়ীক চিন্তা তো আছেই, 2019 সালে, নাইজারে ফরাসি রপ্তানি 17% বৃদ্ধি পেয়েছে, যার পরিমাণ ছিল 127 মিলিয়ন ইউরো। একই সময়ে, নাইজার থেকে ফরাসি আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার পরিমাণ €51 মিলিয়ন। নাইজার প্রধানত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, কম্পিউটার এবং ডিভাইস এবং ফ্রান্স থেকে ফার্মাসিউটিক্যালস আমদানি করে। ফ্রান্সে নাইজারের তিনটি প্রধান রপ্তানি হল অ-লৌহঘটিত ধাতু, ধাতু আকরিক এবং বিভিন্ন রাসায়নিক। প্রায় 30টি ফরাসি কোম্পানি নাইজারে সেবা, বিতরণ এবং খনি সহ নানান অর্থনৈতিক খাতে কাজ করছে।
এবার দেখেন একচুয়ালি খনি বলতে কি বুঝায়,
- স্বর্ণ
- তেজস্ক্রিয় রাসায়নিক পদার্থ
- ইউরেনিয়াম!
নাইজারের এক্সপোর্ট ডাটা দেখলে ব্যাপারটা আরো পরিষ্কার হবে।
Exports The top exports of Niger are:
- Gold ($2.7B)
- Other Oily Seeds ($344M)
- Radioactive Chemicals ($297M)
- Refined Petroleum ($235M)
- Uranium and Thorium Ore ($36.5M)
আর এসবের প্রায় ৫৫% শুধু ফ্রান্সই ক্রয় করে! অর্থাৎ এই সেক্টরে ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় সাপ্লায়ার হলো নাইজার!
সেনাবাহিনী যে অস্ত্র ব্যবহার করে তার বড় অংশই ফ্রান্সের গিফট কিংবা বিক্রি করা। অর্থাৎ তাদের অস্ত্রই এখন তাদের দিকে তাক হতে পারে। তাই ফ্রান্স ইইউ, আমেরিকা সহ সবাইকেই নাইজারের বিরুদ্ধে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।
নাইজার পৃথিবীর সবচেয়ে গরীব দেশের তালিকাভুক্ত। তবে নাইজার কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদশালী!
তাহলে তারা গরীব কেন? ব্যাপারটা হলো, ফ্রান্সের মত উন্নত দেশগুলো নাইজারের মত দেশগুলোকে দিনের পর দিন শোষণ করে চলে। ডেমোক্রেসির নামে করাপ্টেড আজ্ঞাবহ মানুষদের প্রেসিডেন্ট/প্রধানমন্ত্রী পোস্টে বসিয়ে রাখে, পেট্রোনাইজড করে এবং তাদের কিছু ভাগ দিয়ে সব নিজের দেশে নিয়ে আসে।
French President Emmanuel Macron welcomes Niger's President Mohammed Bazoum to the Élysée presidential palace in Paris on February 16, 2022. © AFP - Ludovic Marin |
সেদেশের অথরিটি খুশি, ফ্রান্স খুশি; মাঝে প্রাণ যায় জনগনের। আর জনগনকে চুপ রাখায় মিলিটারি পাওয়ার দিয়ে- তাই মিলিটারিকে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র প্রদান করে। না হয় নাইজারের মত দেশ গুলোতে অত্যাধুনিক পশ্চিমা অস্ত্র থাকে কীভাবে?
আর এই পরিকল্পনা সফল করতে তারা ব্যবহার করে তাদের আর্থিক শক্তি, নানান সংগঠন যেমন ইউএন, ইইউ ; অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, অস্ত্র ইত্যাদি।
নাইজরের মত দেশ গুলোতে সবসময়ই মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, এটা নিয়ে পশ্চিমারা কিছু বলে না। কারণ এর ফলে যে লাভ হয় তার সিংহভাগ যায় তাদের পকেটে।
যেসব জায়গার ভাগ পায় না সেখানেই তারা হাজার নিয়ম নীতি আর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে হাজির হয়।
No comments